প্রত্যন্তের কোনও গ্রামাঞ্চল নয়। খাস কলকাতায় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে দিনের বেলায় বহু মানুষের সামনে পুলিশ ৩৫ বছরের এক গৃহবধূকে নগ্ন করে তল্লাশি চালানোয় কলকাতা হাইকোর্ট ক্রুদ্ধ ও হতবাক। ওই ঘটনায় যুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তারা বলেছে, কলকাতায় এক মহিলাকে যে-ভাবে অপমান করা হয়েছে, তা বিস্ময়কর এবং অমানবিক।
এ ভাবে দেহ-তল্লাশি কেন? পুলিশের দাবি, ওই মহিলার কাছে মাদকদ্রব্য রয়েছে বলে খবর পেয়েছিল তারা। মহিলার দেহ তল্লাশ করেছেন এক মহিলা পুলিশ অফিসারই। কিন্তু সেই সময় সেখানে পুরুষ অফিসারেরাও ছিলেন বলে অভিযোগ। তল্লাশি চালিয়েও অবশ্য ওই মহিলার কাছে আপত্তিকর কিছুই পায়নি পুলিশ।
হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ও বিচারপতি তরুণ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে লিখেছে, পুলিশ যে অসৎ উদ্দেশ্যে ওই মহিলাকে হেনস্থা ও গ্রেফতার করতে চেয়েছিল, তা স্পষ্ট। মহিলার বাড়ি ঘটনাস্থলের কাছেই। তাই গোপনতা বজায় রেখে সেই বাড়িতেই তাঁর দেহ তল্লাশ করা যেত। কিন্তুপুলিশ তা করেনি। নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে হাইকোর্টও সোমবার ওই মহিলাকে বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের প্রতিলিপি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, এই মামলায় যুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই ধরনের অফিসারেরা যাতে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর কোনও তদন্তে যেতে না-পারেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে কমিশনারকে।
ঘটনাটি ২০০৮ সালের। আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, ওই বছর অক্টোবরে ফুলবাগান থানা বিশেষ সূত্রে খবর পায়, বাইপাসের ধারে ময়লাবস্তির এক মহিলা মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। ফুলবাগান থানার অফিসারেরা ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালান। তাতে কিছু মেলেনি। তার পরে ওই মহিলাকে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে নগ্ন করে তাঁর দেহ তল্লাশ করেন এক মহিলা পুলিশ অফিসার। তাতেও কিছু পাওয়া যায়নি। এর পরে এক পুলিশ অফিসার একটি পলিব্যাগ দেখিয়ে বলেন, এই ব্যাগে চরস রয়েছে। পরে পুলিশ জানায়, ওই ব্যাগে ১৫০০ গ্রাম চরস পাওয়া গিয়েছে। ওই মহিলার স্বামীর খোঁজ করা হয়। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। মাদক রাখা ও পাচারের অভিযোগে মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়ে বলে, মিথ্যা গল্প সাজাতে গিয়ে পুলিশ পদে পদে এমন ফাঁক রেখেছে যে, বলা যায়, তাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল না।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয় হাইকোর্টে। সেই আপিল মামলার রায় দিতে গিয়ে ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ওই মহিলা আদালতের কাছে কোনও ক্ষতিপূরণ চাননি। তাই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ থেকে আদালত বিরত থাকছে। ওই মহিলার স্বামী পুলিশি হাজতে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও পুলিশ জানিয়েছে, স্বামীর খোঁজ পাওয়া যেতে পারে বলে মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবে এই মামলায় সত্যকে বিকৃত করেছে। |