রাজনীতির বিষাক্ত প্রশ্ন সামলালেন ক্রিকেটীয় লাবণ্যে
‘অধিনায়ক তিনিই, যিনি জনতার কাছে কোনও বড় স্বপ্নকে খুব সফল ভাবে বিক্রি করতে পারেন।’
ভরা ইডেনের মতোই উত্তাল অধিবেশনে কথাটা বললেন ইমরান খান। সেখানেই থামলেন না, ঈষৎ হেসে যোগ করলেন, ‘‘জানেন তো, টিমটাকে ঠিকঠাক বেছে নেওয়াই ছিল আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’’
এই শক্তির জোরেই পাকিস্তানে পটবদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। আর যে শহরে দাঁড়িয়ে এ কথা বললেন, সেই শহরও মাত্র কিছু কাল আগেই দেখেছে এক পরিবর্তন।
সোমবার, বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবে রাহুল ভট্টাচার্যের সঙ্গে ইমরানের কথোপকথনের বিষয় ছিল ‘ক্যাপ্টেনিং আ নেশন: ক্রিকেট, পলিটিক্স, পাকিস্তান’। জেটল্যাগ আগমনে সামান্য বিলম্ব ঘটাল বটে, কিন্তু বাইশ গজের সপ্রতিভতা মঞ্চেও যথারীতি হাজির। ছবি তোলার বিশৃঙ্খল আবদারে অনুষ্ঠানের সূচনা যখন রীতিমতো বেসামাল, অধিনায়কের মতোই তিনি সটান উঠে গেলেন মাইক্রোফোনের সামনে। পরিস্থিতি আয়ত্তে এল একটু পরেই। এমন নায়কোচিত সামাল দেওয়াও তো অনেক বার দেখেছে এ শহর সাম্প্রতিক অতীতে।
কলকাতা বইমেলায় ইমরান খান। ছবি: উৎপল সরকার
শুরু করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে নওয়াজ শরিফের ব্যাট হাতে নেমে পড়ার ঘটনা দিয়ে। ক্রিকেট থেকে রাজনীতি, ইমরান বিষাক্ত কিছু প্রশ্ন সামলালেন দক্ষ ক্রিকেটারের লাবণ্যে। নওয়াজ শরিফকে দুয়ো দিলেন (‘স্কুলের ছেলে নাকি, দিবাস্বপ্ন দেখত’), অন্না হজারেকে বিঁধলেন (‘বরং একটা দল গড়ে লড়লে ভাল হত’), মার্কিন বিদেশনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন (‘ইজরায়েল-পন্থী একচোখোমির জন্যই তো এত সমস্যা’) এবং কথায় কথায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিও একটি নির্ভুল ইনসুইঙ্গার ধেয়ে গেল (‘বিদেশে পরপর আটটা টেস্ট হারা, মুখের কথা?’)।
কোন ইমরানকে দেখল কলকাতা? যে ইমরান রাজনৈতিক ভাবুক, হুঁশিয়ারি দেন, ইসলামকে পশ্চিমী ঠুলি পরে দেখবেন না, ভুল হবে। যে ইমরান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান, যিনি পাকিস্তানের শাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চান, কিন্তু রোডম্যাপের প্রশ্ন ওঠায় সুকৌশলে প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যান। নোটবই বলছে, তিনি জোট সরকার থেকে শুরু করে বিন লাদেন পর্যন্ত নানা বিষয়ে অনেক কিছু বলেছেন এবং বলেননি।
নাকি সেই নায়ককে দেখল কলকাতা, স্বপ্নকে যিনি সফল ভাবে বিক্রি করতে পারেন!
অন্ধকার: বক্তৃতা শেষ করে ইমরান যখন উপস্থিত সাংবাদিক ও শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ প্রেক্ষাগৃহ অন্ধকার হয়ে যায়। মাইক থেমে যায়। কয়েক মিনিট পরে আলো এলে ইমরান বেরিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান।
কেন এই অন্ধকার? বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ প্রশ্নোত্তর শুরু হয়ে যাওয়ায় ইমরান বেরোতে পারছিলেন না। তাঁর অন্য কর্মসূচিতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় সাহিত্য উৎসবের আয়োজকদের কথা মতোই আমি অল্প সময়ের জন্য আলো নিভিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, যাতে ইমরান দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারেন।”
তবে, প্রেক্ষাগৃহে আলো নেভার ঠিক আগে মাঠের একাংশের বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। জ্বলছিল কিছু সৌর আলো। এ ছাড়া মাঠে বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে জেনারেটরও চালু করতে বলেছিলেন গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সুধাংশু দে। তিনি বলেন, “বিদ্যুতের একটা সামান্য গন্ডগোল হয়েছিল। কিন্তু সাময়িক অন্ধকার হলেও কোনও অঘটন ঘটেনি। জেনারেটর কাজ করেছে।” গিল্ডের দুই কর্তার দু’রকম বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, যা হল তা কি ‘তৈরি করা’ অন্ধকার, না কি বিদ্যুৎ-বিভ্রাট।
এ বার বইমেলায় প্রকাশিত হল বিশ্বনন্দিত ২৫ জন সেলিব্রিটির সাক্ষাৎকার নিয়ে গৌতম ভট্টাচার্যের নতুন বই ‘জয় হে’। বেরোল বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ও রাহুল রায় সম্পাদিত ‘রবীন্দ্রমননে প্রকৃতি ও পরিবেশ’, দেবজ্যোতি মণ্ডলের কাব্যগ্রন্থ ‘কোনো হেমন্তের সন্ধ্যায় ব্যাঙ্গমা যা যা বলেছিলো’, অঞ্জন গোস্বামীর ‘ইন্ডিয়ান ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন দ্য আই অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ’। জিন বদলানো ফসলের বিরুদ্ধে এবং জৈব কৃষির পক্ষে প্রচার করতে ফি মেলায় হাজির থাকে ডিআরসিএসসি। তাঁরা এ বার বের করেছেন অর্ধেন্দুশেখর চট্টোপাধ্যায়ের ‘সবজিবাগান: কেন কীভাবে’। একেবারে নতুন করে বেরোল মধুমিতা দত্তের ‘সাইবার সন্ত্রাস’ বইয়ের পরিবর্ধিত সংস্করণ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.