লাভপুরে প্রদর্শনী নজর কাড়ল প্রশাসনের |
অরুণ মুখোপাধ্যায় • লাভপুর |
সরস্বতী পুজো উপলক্ষে সমাজ সচেতনতামূলক একটি প্রদর্শনী ও পথনাটক হয়েছে লাভপুরে। উদ্যোক্তা লাভপুরের ‘বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী’। থিম হচ্ছে ‘মিলেনিয়াম ডেভলপ্মেন্টে গোল’। জেলা প্রশাসনও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ছোট উদ্যোগ হলেও মানুষের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
লাভপুরের প্রদর্শনীটিকে ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার জন্য বড় মাঠের মধ্যে ৮টি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে ২টি করে বড় মাটির পুতুল রাখা হয়েছে। পুতুলগুলিকে বিভিন্ন প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়েছে। ওই ৮টি প্রদর্শনীতে ৮টি মুখ্য সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে সমাধানের দিশাও দেওয়া হয়েছে। সমস্যাগুলি হল ১. অনাহারে মৃত্যু, ২. অশিক্ষা, ৩. লিঙ্গ বৈষম্য, ৪. শিশুমৃত্যু, ৫. প্রসূতিমৃত্যু, ৬. মারণ রোগ (যেমন এডস্, যক্ষা, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি) ৭. পরিবেশ দূষণ এবং ৮. উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা।
আয়োজক সংস্থার কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই ৮টি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ভারত-সহ বিশ্বের ১৮৯টি দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি বিশেষ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। |
২০১৫ সালের মধ্যে ওই সমস্যাগুলি সমাধান করা হবে উল্লেখ করা হয়েছিল তাতে। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছর কেটে গেলেও ভারত, বিশেষ করে এই রাজ্যে সমস্যাগুলির অধিকাংশেরই সমাধান হয়নি। যেমন ২০০৯ সাল থেকে রাজ্যে কর্মক্ষমতাহীন বয়স্ক মানুষদের জন্য পঞ্চায়েত স্তরে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলার সব পঞ্চায়েতে তা চালু করা যায়নি। এই ব্যাপারে অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধানদের উদ্যোগের অভাবকেই দায়ি করছেন জেলা ডিআরডিসি-র প্রকল্প নির্দেশক বিশ্বনাথ পাল। তিনি জানিয়েছেন, জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও অবধি ৮২টি পঞ্চায়েতের প্রায় ৫ হাজার দরিদ্র সহায় সম্বলহীন মানুষদের একবেলা ভাত বা খিচুড়ি অথবা একবেলা মুড়ি বা চিড়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “টাকার অভাব নেই। পঞ্চায়েত থেকে সঠিক কাগজপত্র পেলেই টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত প্রধানদের মানবিক হতে হবে।”
তেমনই বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে অনুযায়ী জেলার কর্মহীন মানুষদের কাজ দেওয়ার কথা হলেও অধিকাংশ জনই কাজ পেয়েছেন গড়ে ২৫-৩০ দিন। প্রকল্প রূপায়ণে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের জেলা নোডাল আধিকারিক সুপ্রিয় অধিকারী বলেন, “টাকার অভাব নেই। কিন্তু পঞ্চায়েতের কাজ করানোর সদিচ্ছা দরকার।” এ দিকে পঞ্চায়েতের ডাকের অপেক্ষায় বসে থাকা সেই সব কর্মহীন মানুষদের কাজ পাওয়ার অধিকার বিষয়ে সচেতন করা ‘বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী’র এই প্রদর্শনীর অন্যতম লক্ষ্য। উদ্যোক্তাদের এই কর্মোদ্যোগকে সুপ্রিয়বাবুও স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ২৭ জানুয়ারি থেকে। বীরভূম জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌম্যজিৎ দাস প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি এই ধরনের উদ্যোগের প্রংশসা করেন। এই সচেতনতামূলক প্রদর্শনী ভবিষ্যতে আরও বেশি করে আয়োজন করার বিষয়ে তিনি সবাইকে উৎসাহিতও করেন। |