বিল মেটানোয় হুঁশিয়ারি বোলপুর পুরসভাকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর ও রামপুরহাট |
বকেয়া বিল মেটানো হয়নি। এই কারণে আগেই তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। ঠিক একই কারণে বিদ্যুৎ দফতরের হুঁশিয়ারির মুখে পড়ল বোলপুর পুরসভা। এই পুরসভাও তৃণমূল পরিচালিত। যদিও বিদ্যুৎ দফতরের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বকেয়া টাকার কিছু অংশ পরিশোধ করার আশ্বাস দেওয়ায় রবিবার রাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ জুড়ে দেওয়া হয় রামপুরহাট পুরসভায়।
বোলপুর পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ড। পথবাতি, ঘরেঘরে এবং পাড়ায় পানীয় জল সরবরাহ, প্রশাসনিক ভবন-সহ একাধিক কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পুরকর্তৃপক্ষ। বড় এলাকা হওয়ায় শান্তিনিকেতন গ্রুপ সাপ্লাই দফতর ছাড়াও বোলপুর গ্রুপ সাপ্লাই দফতরও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পুর-এলাকায়।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বোলপুর পুরসভার বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা বাকি আছে। বকেয়া বিল মেটানোর জন্য বারে বারে চিঠি, ফোন করা হয়েছে। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ তাতে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। শেষ বারের মতো সতর্ক করা হয়েছে। কাজ না হলে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা ভাবছেন শান্তিনিকেতন ও বোলপুর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্তৃপক্ষ। শান্তিনিকেতনের স্টেশন ম্যানেজার মহম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “কয়েক বছর ধরে বকেয়া বিল এক কোটির বেশি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দিন দশেক আগে এ ব্যাপারে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বকেয়া বিল না মেটালে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, “বিল পরিশোধ করার জন্য বারে বারে জানানো হয়েছে। এর পরেও যদি বিল জমা না পড়ে, তা হলে সংযোগ কেটে দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।” বোলপুরের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল গফফ্রও বলেন, “আমাদের থেকে প্রশাসনিক ভবন, গুদাম-সহ প্রায় ৩২টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে।”
এত টাকার বিল না মেটানোয় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নজরে আনেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্তের জেলা সফরের সময়ে তাঁরা বিষয়টি নজরে আনেন। বোলপুরে সার্কিট হাউসে অবিলম্বে বকেয়া বিল মেটানোর জন্য পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতকে বলেছিলেন। পুরপ্রধান বলেন, “কোথায় কত টাকা বাকি আছে খোঁজ নিচ্ছি। তার পরে বকেয়া টাকা মেটানোর চেষ্টা করব।”
অন্য দিকে, বকেয়া বিল না মেটানোয় শনিবার সকালে রামপুরহাট পুরসভার ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। ১৬ দিনের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ৫ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় রবিবার সন্ধ্যায় সেই সংযোগ জুড়ে দেওয়া হয়। রামপুরহাট গ্রুপ সাপ্লাইয়ের সহকারী বাস্তুকার সূর্যপ্রকাশ সিংহ বলেন, “পুরপ্রধানের কাছ থেকে রবিবার বিকেলে বিল পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পাই। তাতে পুরপ্রধান ১৬ দিনের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। বাকি টাকা কী ভাবে পরিশোধ করবেন, সে ব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।” তিনি জানান, এর পরেই সংযোগ দেওয়া হয়। তবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে প্রশ্নে বাস্তুকার বলেন, “এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোনও দিনই বিল পরিশোধ করব না এ কথা বলিনি। সরকারের কাছ থেকে যে রকম টাকা পাই, সেই ভাবে বিল মেটানো হয়। বিল মেটানোর বিষয় লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কলকাতায় গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।” |