|
|
|
|
|
|
|
সরস্বতী, আথেনা, মিনার্ভা |
কাল ছিল প্রথম জনের পুজো। সেই সূত্রে তাঁকে নিয়ে কিছু কথা। সঙ্গে আরও দু’জন।
যথাক্রমে, গ্রিক ও রোমান। সব মিলিয়ে, বিদ্যাদেবীর তিন রূপ!
|
ছিলেন নদী, হলেন দেবী সরস্বতী |
মানে নদী। ঋগ্বেদে সরস্বতী নদী, আবার দেবীও। প্রথমে এই দেবী ছিলেন নদীরূপিণী, আজও যেমন গঙ্গাদেবী। ঋগ্বেদ ভারতে সমাগত আর্যদের আদিগ্রন্থ। আর্যরা এসে প্রথমে উত্তর-পশ্চিম ভারতের যে অঞ্চলে বসতি করেছিলেন, সেটির নাম দিয়েছিলেন তাঁরা ব্রহ্মাবর্ত। দুই নদীর মধ্যবর্তী এই অঞ্চল। নদী দুটির নাম: সরস্বতী এবং দৃষদ্বতী। নদীর তীরে বেদ আবৃত্ত ও গীত হত। তখন লেখার প্রচলন ছিল না, তাই আবৃত্তি এবং গানই বেদচর্চার উপায় ছিল। বেদ মানে বিদ্যা। অথবা বাক্। যে নদীর ধারে বেদগান, ক্রমশ সেই নদীর নামে বিদ্যাদেবী আরাধিত হলেন, তাঁর নাম হল সরস্বতী। দৃষদ্বতীও হতে পারত, তা হলে বাগ্দেবীর নামের বানান করা আরও ঝকমারি হত।
সরস্বতীর নানা রকম মূর্তি আছে, যেমন অন্য নানা দেবদেবীরও। তবে সচরাচর তিনি চতুর্ভুজা, এবং তাঁর চার হাতে বই, মালা, বীণা এবং জলপাত্র কোথাও বা পাত্র থাকে না, বীণাটি দু’হাতে ধরা থাকে। বেদ যেহেতু চারটি ঋক, সাম, যজুঃ এবং অথর্ব, তাই সরস্বতীর চারটি হাতকে চার বেদের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হবে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। তবে শাস্ত্রমতে চতুর্ভুজের অন্য অর্থ আছে। নানা মুনির নানা মত। একটি মতে, বই হল গদ্যের প্রতীক, মালা কবিতার, বীণা সঙ্গীতের, আর জলপাত্র পবিত্র চিন্তার।
সরস্বতীর বাহন হাঁস। রাজহাঁস। কেন? একটা যুক্তি এই যে, হাঁস জলমেশানো দুধ থেকে দুধটা আলাদা করে পান করতে পারে। অবিদ্যা থেকে বিদ্যাকে ছেঁকে নেওয়াই তো আসল শিক্ষা, তাই সরস্বতী হংসবাহিনী। কিন্তু কখনও আবার তিনি ময়ূরাসীনা। কী তার অর্থ? ময়ূর অহঙ্কারী, নিজের রূপের মোহে নিজেই আবিষ্ট। তাকে বাহন করে সরস্বতী শিক্ষা দেন: বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্।
|
তিনি কলাদেবী, আবার যুদ্ধেরও |
|
এই দেবীটি গ্রিক। আথেনা। তিনি চারুকলা ও কারুকলার দেবী তো বটেই, কিন্তু শুধু এইটুকু পরিচয়ে তাঁকে ধরা যাবে না। তিনি প্রজ্ঞা, সাহস, উৎসাহ, সভ্যতার দেবী। আবার, ন্যায়যুদ্ধ, শক্তি, সুবিচারের অধিষ্ঠাত্রীও তিনি। জেনে রাখা ভাল, আরও নানা কিছুর সঙ্গে আথেনাকে গণিতের দেবী হিসাবেও বর্ণনা করা হয়। গ্রিক পুরাণে তিনি মান্য। এতটাই মান্য যে, গ্রিসে আছে তাঁরই নামাঙ্কিত নগর। আথেন্স। সেই নগরে গ্রিকরা দেবী আথেনার জন্য নির্মাণ করেছিল পার্থেনন। তবে, এই দেবীটি স্রেফ বিদ্যাভ্যাসে তুষ্ট নন মোটেই। শুধুই ভাসা ভাসা দু’চোখ মেলে কাব্যকাহিনি রচনায় তাঁর সাধ নেই। কাব্যে তাঁকে মেলে। ধূর্ত বুদ্ধিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিনি অতীব বুদ্ধিমান। সুতরাং, আশ্চর্য কী যে, কবিরা তো বটেই, বাঘা বাঘা বীরেরাও তাঁর আরাধনা করবেন!
|
সঙ্গে একটি পেঁচা |
|
রোমে গেলে নাকি ‘রোমান’ হতেই হয়! ঠিক সে জন্য হয়তো নয়, কিন্তু দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রোম সাম্রাজ্যে গ্রিক দেবী আথেনার সমতুল্য হয়ে উঠলেন রোমান দেবী মিনার্ভা। এ এক বিচিত্র কাহিনি। ‘আথেনা’ই কি রোমের মাটিতে দেবী ‘মিনার্ভা’ হয়ে দেখা দিলেন! প্রাচীন ইতালির এক চন্দ্রদেবী তাঁর উৎস। আথেনা যেমন বহুবিদ্যার ধাত্রী, তেমনই মিনার্ভাও শুধু কাব্যকলায় আটকে নেই। বয়নবিদ্যা তাঁরই বিষয়। এবং ম্যাজিক। তিনি চিকিৎসার দেবী, আবার বাণিজ্যেরও। কিন্তু, তিনি বাণিজ্যদেবী, আবার তাঁর প্রতীকও একটি পেঁচা, শুধু এইটুকু থেকেই কিন্তু লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর তুলনা টানা ঠিক হবে না। মিনার্ভার ওই পেঁচাটি তাঁর প্রজ্ঞার প্রতীক। |
|
|
|
|
|