জন্মের পরে শিশুর ‘জন্ডিস’ বা পীতরোগ অস্বাভাবিক নয়। চিকিৎসকদের পরিভাষায় ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস। মুর্শিদাবাদের মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতে অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নেয় না। সরাসরি সদ্যোজাতদের ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় বহরমপুর হাসপাতালে।
সময়ের আগেই প্রসব হওয়া শিশুদের দুর্বলতাজনিত সমস্যা নতুন নয়। তবে ‘ঝুঁকি’ নেওয়ার ‘প্রয়োজন’ না দেখিয়ে জেলার আনাচকানাচের হাসপাতাল থেকে এমনই স্বল্প ওজনের ঈষৎ দুর্বল শিশুর ভিড় জমছে বহরমপুর হাসপাতালে।
সামান্য জ্বর, পেটে ব্যাথা, না হয় খেতে না চাওয়ার সমস্যা থাকলেও জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ঠিকানা বদলে যাচ্ছে বহরমপুর জেলা সদর হাসপাতাল।
জেলা সদরের ৪০ শয্যার প্রসূতি সদনে শুক্রবার উঁকি মেরে দেখা গিয়েছে মা-শিশুর থিকথিকে ভিড়ে খাট উজিয়ে মেঝে দখল করে অন্তত ১৪৫ জন মা তাঁদের সদ্যোজাতকে নিয়ে রয়েছেন। হাসপাতালের সুপার পার্থ দে’র কথায়, “কী বলব বলুন অধিকাংশই রেফারড্ হয়ে আসা কেস। সামান্য জ্বর কিংবা জন্ডিসেও যদি এখানে পাঠিয়ে দেয়, কোথায় ঠাঁই দেব বলুন তো!”
তিনি জানান, রেফারড্ হয়ে আসা সেই সব শিশুদের অধিকাংশই আসে ‘শেষ সময়ে’। ফলে তাঁদের অনেককেই চিকিৎসা করার সুযোগও তেমন মেলে না। গত ৪৮ ঘন্টায় ওই শিশু বিভাগে তাই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৯ জন। |
এ অবস্থা সামাল দেওয়ার ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অবশ্য তেমন কোনও ভরসাদায়ক বক্তব্য মেলেনি। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শাহজাহান সিরাজ বলেন, “গত ৪৮ ঘন্টায় ৯টি শিশু মারা গিয়েছে। তবে তোনও সংক্রমণের প্রশ্ন নেই। শেষ সময়ে আসা ওই শিশুদের চিকিৎসা করার তেমন কোনও সুযোগই মেলেনি। এ ঘটনা নতুন নয়।” কিন্তু জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ক্রমান্বয়ে রেফারড্ আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? তার অবশ্য উত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, “সুপারের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।” তবে তা যে নিয়ম মাফিক তা বলাই বাহুল্য। হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, “জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শিশু রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে পাঠানো প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁনিয়েছে। বহরমপুরের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েই জেলার অন্যান্য হাসপাতাল যেন দায় সারছে। ফলে জেলার অন্য হাসপাতাগুলিতে যেখানে শিশু মৃত্যু নেই বললেই চলে, সেখানে আমাদের হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।” তিনি জানান, শিশুদের সঙ্কটজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হলেও বহরমপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু তাদের কলকাতায় পাঠাতে পারছেন না। কেননা, কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হলে বাড়ির লোকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দুষবে। তাই হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা করতে হচ্ছে তাঁদের। মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, এর আগে ২০১০ সালের জুলাই মাসে বহরমপুর সদর হাসপাতাল ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ৪৮ ঘন্টায় ২৭ জন শিশু মারা গিয়েছিল।
শিশু বিভাগে শয্যা-সংখ্যা ৪০। এ দিন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৪৫ জন। ফলে রোগী প্রতি শয্যায় চার থেকে পাঁচ জন মূমুর্ষূ শিশু গাদাগাদি করে রয়েছে। সেই সঙ্গে আত্মীয়-পরিজন, স্বাস্থ্যকর্মী সব মিলিয়ে শিশুবিভাগে এখন উপচে পড়া ভিড়। এ সমস্যা কবে মিটবে কেউ জানে না। |