স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দাতেই প্রসব হয়ে গেল এক বধূর। আর তার জেরে গ্রামবাসীদের হাতে ঘেরাও হলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তা। মালদহের যদুপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।
গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘অমানবিক’ আচরণের অভিযোগ এনে শাস্তির দাবি তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, চাবি নেই ‘অজুহাতে’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরই খোলেননি চিকিৎসক ওবাইদুল্লা চিস্তি। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপতী শুক্রবার বলেন, “যদুপুরে প্রসবের ব্যবস্থা নেই। শুধু আউটডোর চলে। প্রজাতন্ত্র দিবসে সেটাও বন্ধ থাকে। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে কোনও গাফিলতি নেই। ওই মহিলার বাড়ির কাছে সুজাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সব ব্যবস্থা রয়েছে। উনি সেখানে গেলে এমন পরিস্থিতি হত না।”
মালদহের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংশুক বিশ্বাস অবশ্য বলেছেন, “এখানে প্রসব হওয়ার কথা না থাকলেও প্রসব হয়। কেউ এলে তাঁকে ফেরানো হয় না।” আউটডোর বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “বিধি মেনে আউটডোর বন্ধ থাকতেই পারে। তা বলে দায়িত্ব এড়ানো যায় নাকি! যে অভিযোগ উঠেছে, তা অমানবিক বললেও কম বলা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি চাবি চিকিৎসকের কাছেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে।” এ দিন সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তদন্তে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে এবং ওই চিকিৎসককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। পরে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরে ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে রাখা হয়। তিন মাসের মধ্যে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা প্রসবের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে মুক্ত হন তাঁরা। |
ওই এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আবু নাসের খান চৌধুরী বলেন, “বিধায়ক হওয়ার পরেই যদুপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স দিয়ে শয্যা চালুর প্রস্তাব দিই। সেটা হলে এই ঘটনা ঘটত না।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এক সময়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৫টি শয্যা ছিল। ১২ বছরেরও বেশি হল, অন্তর্বিভাগ বন্ধ। বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। একজন চুক্তি ভিত্তিক চিকিৎসক, একজন নার্স, একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই সেখানে রয়েছেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের স্থানীয় নয়াগ্রামের ১৮ বছরের মরিয়াম বিবির প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। মরিয়মের মা বেফুল বিবি বলেন, “ভেবেছিলাম ১৬ কিলোমিটার দূরের কালিয়াচকে সিলামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাব। কিন্তু অঘটন হতে পারে, আশঙ্কায় কাছের যদুপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই।” একদিনের শিশুকে কোলে নিয়ে মরিয়ম বলেন, “যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই, তখন ডাক্তারবাবু কোয়ার্টারে ছিলেন। দু’একজন রোগীও দেখেছি। আমি, মা চিৎকার করে ডাকলাম। উনি চাবি নেই জানিয়ে বারান্দায় অপেক্ষা করতে বললেন। এলেন বাচ্চা হওয়ার পরে।”
চিকিৎসক ওবাইদুল্লা চিস্তির দাবি, তাঁর চাবিটি এক জন চতুর্থ শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে রাখতে দেওয়াতেই এই বিপত্তি। কিন্তু প্রসব যন্ত্রণার কথা জেনেও তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাননি কেন? চিকিৎসকের জবাব, “ওই মহিলাকে যখন আনা হয়, আমি তখন জাতীয় পতাকা তুলছিলাম। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মহিলা বারান্দায় সন্তান প্রসব করেছেন। যা করণীয় তা করি। ওষুধ লিখে মহিলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই।” |