|
|
|
|
ক্ষোভ কংগ্রেসেও |
দুই ডাক্তারের গ্রেফতারিতে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসকমহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিরানব্বই বছরের চিকিৎসক মণি ছেত্রী নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন লালবাজারে। পালিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক ক্ষমতাও তাঁর নেই বলে মণিবাবুর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি। অন্য দিকে প্রণব দাশগুপ্ত শহরের নামী স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ।
আমরি-কাণ্ডে ওই হাসপাতালের পরিচালন বোর্ডের এ হেন দুই চিকিৎসক-সদস্যকে গ্রেফতারের যৌক্তিকতা নিয়ে কলকাতার চিকিৎসক মহল এখন দ্বিধাবিভক্ত।
এ ব্যাপারে রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল প্রভাবিত দুই চিকিৎসক সংগঠন সম্পূর্ণ ভিন্নমত। সিপিএম প্রভাবিত ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস’ এর প্রতিবাদ করেছে। সংগঠনের সম্পাদক সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমরি-কাণ্ডের সঙ্গে ওই দুই খ্যাতনামা চিকিৎসকের সরাসরি কোনও যোগাযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই এই গ্রেফতার বাঞ্ছনীয় নয়।” অন্য দিকে তৃণমূল প্রভাবিত ‘সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি নিমাই নাথের মন্তব্য, “আইন আইনের পথে চলবে। কে দোষী, কে নন, সেটা আইন ঠিক করবে। তাই ধৃতদের পরিচয় যাই হোক, আমাদের কোনও প্রতিবাদ নেই।”
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখাও এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক তথা তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। মণি ছেত্রী, প্রণব দাশগুপ্ত-সহ আমরি’র ডিরেক্টরদের গ্রেফতারি সেটাই প্রমাণ করল। এটা সুশাসনের একটা লক্ষণ।” কিন্তু আমরি’র পরিচালন বোর্ডে রাজ্য সরকারি প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে আইন কি তা হলে আলাদা?
শান্তনুবাবু বলেন, “জানি না, আমরি’র পরিচালন বোর্ডে সরকারের তরফে কারা রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যদি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত হন, তা হলে চাইব, তাঁদের ক্ষেত্রেও আইন আইনের পথেই চলুক।”
এ দিকে আমরি-কাণ্ডে তদন্তের গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ ক্ষুব্ধ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতেই দলের নেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেন, “আমরা সকলেই চাই, আমরি’র ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হোক। কিন্তু সরকারের কাছে আবেদন, নিরপরাধ কাউকে যেন হেনস্থা বা গ্রেফতার করা না-হয়। তা হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।”
এমন মন্তব্য করার মতো কি কিছু ঘটেছে?
মান্নানের জবাব, “বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কাছে নানান অভিযোগ আসছে। আমরি’র সম্পর্কে প্রশাসনিক স্তরে কী রিপোর্ট আছে, তা আমাদের জানা নেই। ফলে আমরা জানি না, প্রকৃত অপরাধী কে। তবে এমন ঘটনা যাতে না-ঘটে, সরকারের কাছে আমাদের সেটাই আবেদন।’’
বস্তুত মণিবাবু ও প্রণববাবুর গ্রেফতারিতে কংগ্রেস শিবিরের একাংশ যে ক্ষুব্ধ, দলের এক নেতার কথায় তা স্পষ্ট। ওই নেতার প্রশ্ন, “এর পরে রেলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কি রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হবে?” কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ এ প্রশ্নও তুলছেন, “আমরি’র পরিচালন বোর্ডে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের আমলারাও আছেন। যে অভিযোগে দুই প্রবীণ চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হল, একই অভিযোগে সেই আমলাদেরও কি গ্রেফতার করা হবে? সরকারি হাসপাতালে কোনও ঘটনা ঘটলে সুপার বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীও কি গ্রেফতার হবেন?”
পাশাপাশি শুক্রবার আলিপুর আদালতে এক আইনজীবীও দুই চিকিৎসকের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সরব হন। ওই আইনজীবী বিশ্বকেতন আচার্যের দাবি, তিনি মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র হয়ে চিকিৎসকদের তরফে এই গ্রেফতারির নিন্দা করতে চান। বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম অবশ্য তাঁকে সওয়াল করার অনুমতি দেননি। বিচারকের বক্তব্য, সওয়াল করতে গেলে এই মামলায় এমসিআই-কে সামিল হতে হবে। পরে আদালতের বাইরে বিশ্বকেতনবাবু বলেন, চিকিৎসকদের এ ভাবে পুলিশ হেনস্থা করায় রাজ্যের চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আদালতকে তিনি সেটাই জানাতে চেয়েছিলেন। |
|
|
|
|
|