নিলয় দাস • ঢেকলাপাড়া (বীরপাড়া) |
বাগান বন্ধ হওয়ার পরে জনপ্রতিনিধি থেকে ইউনিয়নের নেতারা কী ভাবে তাঁদের অবহেলা করেছেন তা ঢেকলাপাড়ার শ্রমিকদের কাছে শুনলেন ইউটিইউসি’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ। শুক্রবার তিনি ওই চা বাগানে গেলে শ্রমিকেরা আরএসপি’র ট্রেড ইউনিয়ন এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে ক্ষোভ জানান শ্রমিকেরা। দলের তরফে ত্রুটি স্বীকার করে উত্তেজনা সামাল দেন অশোকবাবু। শ্রমিকদের তিনি বলেন, “বাগানের শ্রমিকদের পাশে আমরা ছিলাম। মাঝে ব্যবধান বেড়ে যাওয়াটা ভুল হয়েছিল। তা না হলে আপনারা আমাদের ছেড়ে যেতেন না।” এ দিন ওই চা বাগান পরিদর্শন করেন সমাজকর্মী তথা সুপ্রিম কোর্টের খাদ্য অধিকার আইন বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা অনুরাধা তলোয়ারও। এ দিনই রোগে ভুগে ওই চা বাগানের শ্রমিক জিতবাহান খড়িয়ার (৫২) মৃত্যু হয়। বাগান বন্ধের পর ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগে তিনি বাগানে ফিরে আসেন এবং নদীতে পাথর ভাঙার কাজে নামেন। রোগগ্রস্ত ওই শ্রমিক সঠিক চিকিৎসা না-পেয়ে মারা যান বলে অভিযোগ। এ দিন আলাদা ভাবে ওই মৃতের বাড়িতে যান অশোকবাবু ও অনুরাধা দেবী। গত রবিবার ঢেকলাপাড়া বাগানে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রকে। |
এদিন শ্রমিকদের ক্ষোভের সামনে পরে স্থানীয় আরএসপি নেতা গোপাল প্রধান যুক্তি দিতে গেলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। তখনই ভুল স্বীকার করে পরিস্থিতি সামাল দেন অশোকবাবু। বাগানের বাসিন্দা বিষ্ণু তাঁতি বলেন, “বাগানে আরএসপি ছাড়া কোনও শ্রমিক ইউনিয়ন দেখিনি। বাগান বন্ধের পর আর শ্রমিক নেতারা আসছেন না। মানুষ মরছে। নেতারা কিছু করছেন না। বাধ্য হয়েই আদিবাসী বিকাশ পরিষদে যোগ দিই।” ইউটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক বিতর্কে না গিয়ে বলতে থাকেন, “অতীতে রাজ্য সরকার বন্ধ বাগানের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়নি। তখন অনাহারজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনা অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। বর্তমান সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতাও তীব্র হওয়ার জন্য ৮ জন মারা গেছেন। শুরু থেকে গুরুত্ব দিলে এত জটিল হত না।” অশোকবাবু ফিরে যাওয়ার পরেই ঢেকলাপাড়া তা বাগান পরিদর্শনে যান সমাজকর্মী তথা সুপ্রিম কোর্টের খাদ্য অধিকার আইন বিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা অনুরাধা তালোয়ার। সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে বাগানে এমন কিছু বাড়িতে গিয়ে মৃতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হাতির হানায় ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতি না হওয়া থেকে কিছু সরকারি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না বলে জানতে পারেন তিনি। গ্রাম পঞ্চায়েত ঠিকঠাক কাজ করছে না বলে ইভিযোগ পাওয়ার পরে বাগান সংলগ্ন বান্দাপানি পঞ্চায়েতে যান তিনি। বেলা সওয়া ১২টায় পঞ্চায়েতে চৌকিদার ছাড়া অন্য কোনও কর্মী দফতরে আসেননি। প্রতিনিয়ত এ ভাবে পঞ্চায়েত চলে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ জানান। সাড়ে বারোটা নাগাদ একটি গাড়ি চড়ে কয়েকজন কর্মী অবশ্য গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে যান। অনুরাধা দেবী বলেন, “যেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে সেখানে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করা প্রয়োজন। বাগানের অনেক সমস্যা আছে। সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে।” |