নিজের বাড়িতে আংশিক সময়ের এক কলেজ-শিক্ষিকার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে অশোকনগরে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম অগ্নিবীণা দেব (৩০)। তিনি বাঘা যতীন সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ে আংশিক সময়ের বাংলার শিক্ষিকা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই মহিলা।
তবে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের বেতন বাবদ অর্থ দিচ্ছে না। অগ্নিবীণাদেবী অনটনের কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অগ্নিবীণাদেবীর দাদা এবং কয়েক জন প্রতিবেশী ঘরের সিলিং থেকে ওই শিক্ষিকাকে ঝুলতে দেখেন। পুলিশ গিয়ে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা অগ্নিবীণাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে তাঁর দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘কুটাব’-এর অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাঁদের বেতন বাবদ অর্থ দিচ্ছে না। এটা চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ বলেন, “আর্থিক অনটনের জেরেই আত্মহত্যা করেছেন অগ্নিবীণা।” তবে অশোকনগরে অগ্নিবীণাদেবীর প্রতিবেশীদের কথায় এই অভিযোগের তেমন সমর্থন মেলেনি। ওই তরুণীর বাবা কয়েক মাস আগে মারা গিয়েছেন। তিনি ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা করুণাদেবী অসুস্থ। দাদা কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন।
অগ্নিবীণার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বাঘা যতীন সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শান্তিরঞ্জন পালচৌধুরী জানান, কলেজের তহবিল থেকে তাঁদের আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়। তাঁরা মাসে পান ছ’হাজার টাকা। তবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে টাকা না-মেলায় তাঁদের বর্ধিত বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কলেজ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বর্ধিত বেতন সংক্রান্ত যে-নির্দেশিকা চালু হয়েছে, সেই অনুযায়ী অগ্নিবীণাদেবীর মাসে ৯১৫০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সেই হারে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
অধ্যক্ষ শান্তিরঞ্জনবাবু বলেন, “গত ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন বাবদ টাকা এসেছে কলেজে। জানুয়ারির বেতনের সঙ্গে সেই টাকা দেওয়া হবে বলে তাঁদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।”অবিলম্বে বর্ধিত হারে বেতন চালু করার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে মিছিল করে মেট্রো চ্যানেলে জড়ো হন আংশিক সময়ের শিক্ষকদের ওই সংগঠনের সদস্যেরা। রাজ্যপালের কাছেও স্মারকলিপি দেন তাঁরা। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, কোন কলেজে আংশিক সময়ের কত শিক্ষক আছেন, কত দিন রয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সব তথ্য পেতেই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছে। ফলে তাঁদের জন্য বেতন ঠিক করতেও সময় লেগেছে। এখন বর্ধিত হারে বেতন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। |