|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পুর উদ্যোগ |
মুক্তির আশা |
কাজল গুপ্ত |
অবশেষে মুক্তির আশা। অন্তত পুর প্রশাসনের দাবি তা-ই। দীর্ঘ দিন কাশীপুর থেকে সিঁথি এলাকার একাংশের বাসিন্দারা জল জমার সমস্যায় জেরবার ছিলেন। অভিযোগ, অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যেত। বেশ কয়েক দিন তা জমে থাকত। ভারী বৃষ্টি হলে চূড়ান্ত ভোগান্তি হত। এ বার এই অঞ্চলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক-এর (এডিবি) অর্থে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের (কেইআইপি) আওতায় নিকাশি প্রকল্পের কাজ করছে কলকাতা পুরসভা।
নতুন নিকাশি ব্যবস্থায় বর্ষার জল সোজা গঙ্গায় চলে যাবে বলে পুরসভার দাবি। ফলে বৃষ্টি হলে দ্রুত জল নেমে যাবে। বিটি রোডের সমান্তরাল কাশীপুর রোড। এই দুই রাস্তার মাঝের এলাকার নিকাশি সমস্যা দীর্ঘ দিনের। মূলত খোলা নর্দমাই (পরে বেশির ভাগ জায়গায় ঢাকার ব্যবস্থা হয়েছিল) ছিল জমা জল বেরনোর মূল পথ। কিন্তু সংস্কারের অভাবে তা অনেক জায়গাতেই বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে, গঙ্গার সঙ্গে নিকাশির সরাসরি যোগাযোগ নিয়েও সমস্যা ছিল। |
|
এ বার সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করল কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, নদর্মা সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে নিকাশি পথ তৈরিরও পরিকল্পনা করা হয়। কয়েকটি জায়গায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে বোঝা যায়, প্রচলিত রীতিতে নিকাশি সংস্কার করা যাবে না। তখন মাইক্রোটানেলিং পদ্ধতিতে গঙ্গার সঙ্গে সরাসরি সংযোগের পরিকল্পনা করা হয়। ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে এই কাজ হচ্ছে। ব্যয় হবে ১২০ কোটি টাকা।
এত দিন বৃষ্টি হলে কাশীপুরের গোপাল চ্যাটার্জি রোড এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা হত। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম সরখেল বলেন, “বৃষ্টি বা জলের পাইপ ফেটে জল জমে যেত। দীর্ঘ দিন জমে থাকত। জলে আবর্জনা মিশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হত। বর্ষা এলে মনে হত না কলকাতা পুর এলাকায় থাকি। তার মধ্য দিয়েই ছাত্রছাত্রী ও নিত্যযাত্রীরা যাতায়াত করতেন। অনেক বার বলা হয়েছে। বেশ কয়েক বার রাস্তা খুঁড়ে কাজ করতেও দেখেছি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ”
শুধু কাশীপুরের একটি নির্দিষ্ট অংশই নয়, বিটি রোড বরাবর চিড়িয়ামোড় থেকে টানা সিঁথির মোড় পর্যন্ত অংশে এই জলছবি দেখা যেত। বিশেষত কাঁটাকল এলাকা, গোবিন্দ মণ্ডল লেন, সৎচাষি পাড়া-সহ আশপাশের এলাকার খারাপ অবস্থা হত। স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু দে-র কথায়: “জল জমবে। তার সঙ্গে নোংরা মিশবে। তার মধ্য দিয়েই হেঁটে যেতে হবে। এখানে এ ভাবেই কুড়ি বছর কেটে গেল। প্রশাসনের কাছে বহু বার আবেদন করা হয়েছে।” বাসিন্দা রানা রায় বলেন, “বিটি রোডের জল ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় জমে যেত। বিটি রোডের ধারে খোলা নর্দমা অল্প বৃষ্টিতেই ভরে যেত। বর্ষায় চলাচলের জন্য রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে ওঠে এই সব এলাকা।” |
|
বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের বামশাসিত পুরবোর্ডের সময়ে বার বার এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলের তরফে শুধু প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু কিছুই হয়নি। কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বার ছবিটি বদলাতে চলেছে। বিটি রোড বরাবর নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির কাজ চলেছে। কাজ শেষ হলে বর্ষার জল বিটি রোড থেকে দ্রুত গঙ্গায় চলে যাবে।
কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহার দাবি, “এত দিনের সমস্যার এ বার সমাধান হবে। ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এই প্রকল্পের ফলে উপকৃত হবেন।” মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “এডিবি-র টাকায় কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে শুধু ১ নম্বর বরোই নয়, কলকাতা পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এই কাজ হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিনের জল জমার সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।” প্রশ্ন উঠেছে বর্ষার জমা জল সরাসরি গঙ্গায় ফেলা হলে জল সংরক্ষণের কী হবে? রাজীববাবু বলেন, “এই প্রকল্পে জল সংরক্ষণের বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্রুত তা কার্যকরী হবে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|