দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
থমকে খাল সংস্কার
যথা পূর্বং...
পযুক্ত পুনর্বাসন দিয়ে এক বার সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই অবস্থা যে-কে-সেই। কিছুতেই দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না টালিগঞ্জ-পঞ্চান্নগ্রাম খালের (টিপি ক্যানাল) পাড়। আর এর জেরে আটকে রয়েছে খাল সংস্কারের কাজ।
সুতি খাল থেকে বেরিয়ে বাঘা যতীনের রাজাপুর এলাকা, সন্তোষপুর জোড়াব্রিজ, কালিকাপুর, হুসেনপুর হয়ে চৌবাগা খালে গিয়ে মিশেছে টিপি ক্যানাল। বাঘা যতীন, যাদবপুরের কিছু এলাকা এবং সন্তোষপুর, গড়ফা ও বাইপাস সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিকাশি ব্যবস্থা খালটির উপর নির্ভরশীল। কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (কেইআইপি) সূত্রে খবর, খালটি সংস্কারের অধিকাংশ কাজই হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু দখলদারির সমস্যার জন্য আটকে রয়েছে কিছু অংশের কাজ। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিকাশি ব্যবস্থা অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দখলদারদের সরিয়ে দিলেও আবার নতুন করে দখল হয়ে যায় খালপাড়ের বিভিন্ন এলাকা। এই সন্তোষপুর জোড়াব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দখলদারির সমস্যাই টিপি ক্যানাল সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পথে বড় বাধা। অনেক চেষ্টা করেও তা সমাধানের কোনও পথ বার করা যায়নি বলে কেইআইপি সূত্রে খবর।
১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে খালপাড়ের বাসিন্দাদের সরানো হলেও আবার সেই জায়গা নতুন করে দখল হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় এদের তোলার চেষ্টা করছি। না হলে বাসিন্দারা খাল সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারবেন না।” স্থানীয় সিপিএম নেতা এবং ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সুব্রত দাশগুপ্তের কথায়: “খাল সংস্কারের কাজের গতিতে ঘাটতি রয়েছে। পুরনো দখলদারদের প্রত্যেককে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। তার পরেও প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্য খালপাড় দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না।”
কিন্তু যেখানে খালের বেশির ভাগ অংশের সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে কিছু অংশের অবশিষ্ট কাজের জন্য কতটা সমস্যা হতে পারে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেইআইপি-র এক বাস্তুকার বলেন, “যে অংশের সংস্কার হয়নি, তা খালের প্রায় মধ্যবর্তী এলাকা। ফলে জলের গতি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।”
সন্তোষপুর জোড়া ব্রিজ সংলগ্ন ইস্টার্ন পার্ক এলাকার নাগরিকেরাও এই দখলদারির সমস্যা নিয়ে ক্ষুব্ধ। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পাড়ায় ঢোকার মুখে কিছু দোকান দীর্ঘ দিন ধরে এমন ভাবে রাস্তা আটকে রেখেছে যে পাশাপাশি দু’টি গাড়িও চলাচল করতে পারে না। স্থানীয় সূত্রে খবর, খালটি সংস্কারের সময় রাস্তাটি দখলমুক্ত করে কাজ করার জন্য নাগরিকদের তরফ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এলাকার বাসিন্দা দীপক চক্রবর্তীর কথায়: “শুধু ইস্টার্ন পার্ক অঞ্চলের বাসিন্দারাই নন, খালপাড়ের ওই অংশ দখলমুক্ত করা না গেলে ইএম বাইপাস সংলগ্ন যাদবপুর ও বাঘা যতীন এলাকার বাসিন্দারাও সহজে জমা জলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন না।”
কেইআইপি-র ক্যানাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্পের অধিকর্তা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দখলদারি সরানো আমাদের কাজ নয়। তবুও এর জন্য যা করার দরকার করছি। শেষ পর্যন্ত কিছু না হলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.