|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা
নামবদলের পালা |
‘জামিনী’-যন্ত্রণা |
আশিস পাঠক |
বিস্তর বিপদে পড়েছে হর্ষবর্ধনের বিড়ালটি। উত্তর কলকাতার গলির পরে গলি, তস্য গলি একা চিনে বাড়ি ফিরে এসেছিল সে, শিব্রামের গল্পে। কিন্তু সল্টলেকে তার জারিজুরি এ বার বোধ হয় খাটল না।
সম্প্রতি এক শীতের বিকেলে হর্ষবর্ধন তাকে রেখে এলেন ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক, থুড়ি, মাতঙ্গিনী হাজরা জলাধারের কাছে। তার পরেই গোলযোগের সূত্রপাত। মার্জার বেচারি ট্যাঙ্কগুলিকে সব নম্বরেই চিনত এত কাল। কিন্তু এ বার স্বামী বিবেকানন্দ থেকে কোন পথে গেলে ‘জামিনী’ রায় জলাধারে পৌঁছনো যাবে কে বলবে?
সুতরাং এমনি করে ঘুরিব দূরে...। কিন্তু নামে কী যায় আসে? ১৩ নম্বর যদি মাতঙ্গিনী হাজরা না হয়ে স্বামী বিবেকানন্দই হত তবেই বা কী আসত-যেত? প্রশ্নটাকে অবশ্য এ ভাবে দেখছেন না সল্টলে কের একাংশ বাসিন্দা। |
|
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা যেমন বললেন, “নাম বা নম্বর কোনওটাতেই কিছু যায় আসে না। জায়গাটাকে চিনতে পারা নিয়ে কথা। আর সেখানেই এত দিনের চালু একটা অভ্যেসকে বদলানোর প্রয়োজনটা কী সেটা ভেবে দেখা দরকার।”
বিশেষ করে, সল্টলেকের অধিকাংশ ট্যাঙ্কের সঙ্গেই যেখানে ‘মনীষী’দের জীবনের কোনও যোগাযোগ নেই, সেখানে তো ব্যাপারটা আরও অপ্রাসঙ্গিক, এমনটাই মনে করছেন সল্টলেকের অনেক বাসিন্দা। “কলকাতার অনেক রাস্তার পুরনো নাম বদলে নতুন নাম রাখা হয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নামে। |
|
কিন্তু সেখানে যাঁর নামে রাস্তা তাঁর সঙ্গে এলাকার কোনও না কোনও যোগাযোগ ছিল। আমহার্স্ট স্ট্রিট সে কারণেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি হয়নি, হয়েছে রাজা রামমোহন রায় সরণি,” বলছেন ৮ নম্বর ট্যাঙ্ক এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক বাসিন্দা।
তবে নামবদলে তেমন কোনও অসুবিধে হবে না, সাফ জানিয়ে দিলেন ট্যাক্সিচালক উপেন্দ্র পটেল। বললেন, “নম্বরগুলোও তো আস্তে আস্তে চিনতে হয়েছে, নামগুলোও না হয় সে ভাবেই চিনে নেব।” অর্থাৎ কোন নম্বরে কোন মনীষী সেটা রপ্ত করতেই কেটে যাবে বেশ কিছু দিন। |
|
অবশ্য রপ্ত না করলেই বা কী যায় আসে? আমহার্স্ট স্ট্রিটকে রাজা রামমোহন রায় সরণি বলেন ক’জন? বরং বাস কন্ডাক্টরকে রাজা রামমোহন রায় সরণি যাবে এমন প্রশ্ন করলে ধাঁধায় পড়বেন তিনি। আর যিনি নতুন, একেলা চলবেন এই সল্টলেকে তাঁকে নিশ্চয় গাইতে হবে, পথের সন্ধান কে কবে?
তা না হলে ভরসা কাক্বেশ্বরই, হ য ব র ল-র। গুছিয়ে বুঝিয়ে দেবেন তিনি। কাগেয়াপট্টি কত দূর?
‘তা বলা ভারি শক্ত। ঘণ্টা হিসেবে চার আনা, মাইল হিসেবে দশ পয়সা, নম্বরের হিসেবে তেরো। আর যদি নামের হিসেব চাও তবে ঋষি অরবিন্দের চেয়ে মাদার টেরিজা যত দূর...’ |
পরিবর্তনের আগে ও পরে |
নম্বর |
নাম |
১ |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
২ |
কাজী নজরুল ইসলাম |
৩ |
স্বামী বিবেকানন্দ |
৪ |
ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব |
৫ |
মেঘনাদ সাহা |
৬ |
মহানায়ক উত্তমকুমার |
৭ |
যামিনী রায় |
৮ |
ঋষি অরবিন্দ |
৯ |
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
১০ |
রাজা রামমোহন রায় |
১১ |
শহিদ ক্ষুদিরাম বসু |
১২ |
মাদার টেরিজা |
১৩ |
মাতঙ্গিনী হাজরা |
১৪ |
ভগৎ সিংহ |
১৫ |
ভীমরাও অম্বেডকর |
১৬ |
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু |
|
কী বলেন |
আমরা বড় বেশি বিশ্বনাগরিক হয়ে উঠেছিলাম। এখন একটু জাতীয়তাবাদী হতে চাই। যাঁদের আমরা স্মরণ করতে চাই সেই বরেণ্য মানুষদের নামে ট্যাঙ্কের নাম হলে তো ভালই।
শুভাপ্রসন্ন, শিল্পী |
এটি মুখ্যমন্ত্রীরই ইচ্ছা ছিল। আমরা সেটিকেই কার্যকর করছি।
কৃষ্ণা চক্রবর্তী, পুরপ্রধান, বিধাননগর |
মনীষীদের স্মরণ করা ভাল ব্যাপার। কিন্তু শুধু নাম বদলালেই হবে না, নম্বর দিয়ে ট্যাঙ্ক চেনার এত কালের অভ্যাস কী ভাবে বদলানো যায় সেটাও ভাবতে হবে।
পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার, চিকিৎসক |
|
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
|
|
|
|
|
|