|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
সুরাহা কবে |
খন্দে ঘেরা জীবন |
আর্যভট্ট খান |
কেউ বলেন, জায়গাটি মাছ চাষের উপযুক্ত! কেউ আবার বলেন, হাল টানার পরে খেতের অবস্থাও এর চেয়ে অন্তত ভাল থাকে!
নিজেদের এলাকার রাস্তা সম্পর্কে এ রকমই নানা উপমা টানেন এলাকার বাসিন্দারা। আর এই রাস্তা দিয়েই প্রাণ হাতে নিত্য যাতায়াত করতে হয় রাজারহাট, কেষ্টপুর, কৈখালি, চিনার পার্কের বাসিন্দাদের।
এ কিন্তু কোনও গ্রামের এঁদো রাস্তা নয়, নিউটাউন-রাজারহাটের মতো মেগাসিটির খুব কাছেই তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এই হাল। এই তিনটি রাস্তারই দু’পাশে তৈরি হচ্ছে অজস্র বহুতল ও আবাসন। রোজ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে প্রচুর বাস, অটো, স্কুলবাস, গাড়ি। বেহাল এই তিন রাস্তার বড় বড় গর্তে পড়ে কখনও গাড়ি খারাপ হচ্ছে, কখনও বা গাড়িগুলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারছে পথচারীকে। |
|
লাউহাটি রোড |
এই তিনটি রাস্তার মধ্যে একটি কৈখালি থেকে বিমানবন্দরের পাঁচিল ঘেঁষে চলে গিয়েছে রাজারহাট পর্যন্ত। রাস্তাটি লাউহাটি রোড নামে পরিচিত। ভিআইপি রোড থেকে সরাসরি রাজারহাট যাওয়ার জন্য এটিই প্রধান রাস্তা। এই রাস্তায় গেলে দেখা যাবে শীতেও গর্তগুলিতে জল জমে রয়েছে। আর বর্ষাকালে তো কথাই নেই রাস্তাটি পরিণত হয় ছোটখাট পুকুরে। এলাকাবাসীরা জানান, বেহাল এই রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যানজট হওয়া প্রায় রোজকার ঘটনা। রাজারহাটের বাসিন্দা নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য: ‘‘খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা দিয়ে অটোয় যাতায়াত করার সময় মনে হয় যেন নৌকায় বসে রয়েছি।’’ আর এক বাসিন্দা বারীন মজুমদার বললেন, ‘‘রাস্তার এই গর্তগুলিতে তো অনায়াসেই শোল মাছ চাষ করা যায়!’’ আবার, চিনার পার্ক থেকে রাজারহাট পর্যন্ত রাজারহাট রোডের অবস্থা এতটাই খারাপ যে অনেকেই এটিকে রাস্তা বলতে নারাজ। চিনার পার্ক থেকে আটঘরা, দশদ্রোণ হয়ে রাজারহাট পর্যন্ত গোটা রাস্তাটিই খন্দে ভরা। অথচ, মেগাসিটি নিউটাউনে যাওয়ার জন্য রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাসিন্দারা জানান, নিউটাউন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এই রাজারহাট রোডে এসে মেশার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু খোদ রাজারহাট রোডটিই রয়েছে বেহাল অবস্থায়। এই রাস্তার দু’দিকে তৈরি হয়েছে প্রচুর আবাসন। একটি আবাসনের বাসিন্দা বারীন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নিউটাউনের খুব কাছে বলে এখানে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। কিন্তু রাস্তার যা হাল তাতে গাড়ি বার করতে পারি না। রাস্তার হাল এ রকম হবে ভাবতেই পারিনি।’’ ওই এলাকার এক স্কুলছাত্রের অভিভাবক অভীক দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘আমার ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বেহাল এই রাস্তায় স্কুলবাসে প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়। যে কোনও মুহূর্তে এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ |
|
|
কেষ্টপুর রোড |
রাজারহাট রোড |
|
এ দিকে, কেষ্টপুর মোড় থেকে কেষ্টপুর রোড ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে রাস্তাটাই যেন হারিয়ে যায়। এই রাস্তাটি নিউটাউনের সেক্টর ফাইভে গিয়ে মিশেছে। রাস্তায় বড় বড় গর্তে এই শীতেও একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। হানাপাড়া থেকে কেষ্টপুর মিশন বাজার পর্যন্ত এই রাস্তাটি পুরোই খারাপ। ভিআইপি রোড থেকে নিউটাউন যাওয়ার জন্য এই রাস্তা এখন অফিসযাত্রী ও নিত্যযাত্রীরা ব্যবহার করেন। তাঁদের অভিযোগ, খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় চলাচল করা রীতিমতো কষ্টকর।
অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে যেতে গেলে তো নাভিশ্বাস ওঠে।
রাজারহাট রোড ও লাউহাটি রোডটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত বিভাগের বারাসত হাইওয়ে ডিভিশনের। কেষ্টপুর রোডের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে রাজারহাট পুরসভা। পূর্ত বিভাগের হাইওয়ে ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কৈখালি থেকে রাজারহাট পর্যন্ত ১.৭৫ কিলোমিটার রাস্তা সারানোর টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আশা করা যায় ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শুরু হবে। অন্য দিকে, চিনার পার্ক থেকে রাজারহাট রোডের বেহাল দশা সারাতে এক বছর আগেই আমরা টাকার অনুমোদনের জন্য রাজ্য অর্থ দফতরে আবেদন করেছি। তা মঞ্জুর হলেই কাজ শুরু হবে। এই রাস্তায় অবশ্য মাঝেমধ্যে প্যাচওয়ার্ক করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, কেষ্টপুর রোডের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে রাজারহাট গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাস্তাটি আমরা আগে মেরামত করেছি। কিন্তু রাস্তার দু’পাশে নিকাশি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ফলে নর্দমা থেকে জল উপচে জমা হয়েই রাস্তা বার বার খারাপ হচ্ছে। এ বার নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করে পাকাপাকি ভাবে রাস্তা সারানোর কাজে হাত দেওয়া হবে।’’
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ
|
|
|
|
|
|