সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
প্রচুর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারল না বাংলার ফুটবলাররা। শুক্রবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বি সি রায় ট্রফির জুনিয়র জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতার মূলপর্বে মিজোরামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত গোল শূন্য ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাদের। বাংলা এবং মিজোরাম এখনও পর্যন্ত ১টি করে ম্যাচ জেতা এবং ১টি করে ড্র করায় পয়েন্টের দিক থেকে তারা সমান। তবে প্রথম ম্যাচ ৫-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন খেতাবের দিকে এখনও সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে বাংলাই। বুধবার মূলপর্বের প্রথম ম্যাচে কর্ণাটককে ৫-১ গোলে হারিয়ে ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছিল বাংলার সুমিত ঘোষ, ফৈয়াজরা। এ দিন মিজরামের উপর প্রথম থেকে আক্রমণ চালালেও শেষ পর্যন্ত তারা গোল পায়নি। তুলনায় কম হলেও মিজোরামও বেশ কয়েকটি ভাল সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি। মূলপর্বে ৪ টি দলের প্রত্যেককে ৩টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। এ দিন পর্যন্ত ২ টি করে ম্যাচ তাদের খেলা হয়ে গেল। এ দিন ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কর্ণাটকের ম্যাচটিও গোল শূন্য ড্র হয়েছে। বুধবার মিজোরাম ১-০ গোলে হারিয়েছিল ঝাড়খণ্ডকে। তাতে চারটি দলের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে বাংলাই। রবিবার মূলপর্বের শেষ ম্যাচে বাংলা মুখোমুখি হবে ঝাড়খণ্ডের। মিজোরাম খেলবে কর্ণাটকের সঙ্গে। শেষ ম্যাচের আগে বাংলা এবং মিজোরাম সমান পয়েন্ট পাওয়ায় রবিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম এবং রানিডাঙার এসএসবি মাঠে একই সময়ে দুটি ম্যাচ করাতে চায় ফেডারেশন। |
এ দিন গোল করার অন্তত ৭ টি ভাল সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল বাংলার ফৈয়াজ, রাজীব ঘড়ুইরা। প্রথমার্ধে বার তিনেক গোলে মুখে গিয়েও জালে বল ঠেলতে ব্যর্থ হয় সুমিত, ফৈয়াজ, সায়ন দত্ত। ২ টি সুযোগ এসেছিল মিজোরামের কাছেও। রামসঙ্গলিয়ানা বাংলার বক্সে বল বাড়িয়ে দিলে লালরুয়াতফেলা গোল করার ভাল সুযোগ পেয়েছিল। সামনে শুধু গোলকিপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গোল অবশ্য হল না। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে লালরাম্মুয়ানপুইয়া বল পাস করলে গোলের মুখে গিয়েও ফের সুযোগ নষ্ট করে লালরুয়াতফেলা। দ্বিতীয়ার্ধে তাই গোল করার চাপ ছিল দু’ পক্ষেরই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মিজোরামকে চেপে ধরে সায়ন, ফৈয়াজ, সুমিতরা। ১৫ মিনিটের মধ্যে ৩টি গোলের সুযোগ নষ্ট হয়। মিজোরামের ডিফেন্ডারদের ভুলে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যায় সায়ন। দু’ জনকে ট্যাকেল করে গোলের মুখ খুললেও গোলে ঠিক মতো শটই নিতে পারেনি সায়ন। একটু পরেই গোলের সামনে রীতেশ দেওয়া ক্রস পা ছোঁয়ালেই গোল করার সম্ভাবনা ছিল ফৈয়াজের। ক্ষণিকের মধ্যে তন্ময় দাস বল এগিয়ে দিলে সুমিতের শট গোলকিপারের মাথার ওপর বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। এ বার ভাগ্য সহায় হয়নি সুমিতের। কর্নার কিক থেকেও এর পর গোল করার দু’টি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলার ফুটবলাররা। এক দিকে মিস পাস অন্য দিকে ফুটবলারদের মধ্যে পারষ্পরিক বোঝাপড়ার অভাব বাংলা দলে গোটা ম্যাচেই নজরে পড়েছে। পাস বাড়িয়ে দিলে যেখানে ভাল সুযোগ এমনকি গোলও হতে পারত, সেখানে রাজীবের মতো ফুটবলারদের একা গোল করার চেষ্টা ব্যর্থতা ডেকে আনে। ফুটবলারদের চেয়েও এ দিন মানসিক দিক থেকে আরও বেশি চাপে ছিলেন কোচ প্রশান্ত চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার মা ইরাদেবীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাগডোগরা থেকে দুপুরের বিমানে তিনি কলকাতায় যান। বিকেলে দল অনুশীলন করে তাঁকে ছাড়াই। মায়ের সৎকার সেরে দার্জিলিং মেলে এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে পৌঁছন বাংলার কোচ। এ দিন খেলার শেষে তিনি বলেন, “মাকে হারিয়েছি। বাংলার আমার আরেক মা। সেই টানেই এ দিন ম্যাচের জন্য চলে এসেছি। এ দিনের ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তবে ফুটবলাররা ভাল খেলেছে। যদিও অনেক সুযোগ পেয়ে নষ্ট করেছে তারা। ভুল কিছু হয়েছে। সে সব নিয়ে অনুশীলনে তাদের শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করব।” মিজোরামের কোচ তুয়াকাও মনে করেন, তাঁদের ফুটবলাররা সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারলে অন্তত ২টি গোল তাঁরা পেতেন-ই। তাঁর মতে লালরুয়াতফেলা এবং ইশাক কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেছে। এ দিন জুনিয়র জাতীয় দলের কোচ কলিন টোল ছাড়াও মাঠে উপস্থিত ছিলেন স্কট ওডনেল। তিনি ফেডারেশনের উদ্যোগে যে সব ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি হবে সেগুলির দায়িত্বে রয়েছেন। |