ব্যারেটো এখনও ছায়া দিচ্ছেন বাগানে
মোহনবাগান ২ (ব্যারেটো, জুয়েল)
পৈলান অ্যারোজ ০
ফেসবুক, টুইটারে উপচে পড়ছে অনুরোধ। এক সময়ের ‘ঈশ্বর’-এর উদ্দেশে লেখা হচ্ছে-- ‘অনেক হয়েছে আর নয়, প্লিজ এ বার আপনি বুটটা তুলে রাখুন’ অথবা ‘আপনি আমাদের অনেক দিয়েছেন, তবুও বলছি, এ বার অবসরটা নিয়ে ফেলুন।’
কিন্তু মোহনবাগান তীব্র চাপের মধ্যে পড়ে গেলে তিনি যে এখনও ত্রাতা তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। চৌষট্টি মিনিট পর্যন্ত দমবন্ধ হয়ে থাকা সুব্রত ব্রিগেডকে ‘ছায়া’ দিল সবুজ তোতার ডানা-ই। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা নেওয়ার সময় চৌত্রিশের ব্রাজিলিয়ানকে দেখে অনেকেরই মনে পড়ছিল কবীর সুমনের গান“তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন, বনস্পতির ছায়া দিলেন। সারা জীবন।”
হাদসন লিমার কর্নার হেডে ফ্লিক করে ব্যারেটো স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন বাগানে। আর দুই বঙ্গ সন্তান পান্ডুয়ার রহিম নবি আর বজবজের জুয়েল রাজার যুগলবন্দি নিশ্চিত করে দিল তিন পয়েন্ট। সঙ্গে আই লিগ টেবিলে এক ধাক্কায় সাত থেকে তিনে ফিরল মোহনবাগান। কিন্তু তাতেও কি চিন্তা কমল গঙ্গাপারের ক্লাবে? “সেকেন্ড হাফটা কিন্তু টিম ভাল খেলেছে। সবে চোট সারিয়ে ফিরেছে সমস্যা তো.....,” বলে থামেন পোড়খাওয়া সুব্রত ভট্টাচার্য। পরক্ষণেই মোহন টিডির স্বগতোক্তি, “পয়েন্ট দরকার, পয়েন্ট। আরও পয়েন্ট কুড়োতে হবে আগে যেতে হলে।”
ব্যারেটোর ভলির দর্শক সুনীল-ওডাফা। শুক্রবার। ছবি: উৎপল সরকার
পৈলান অ্যারোজ এ বারের আই লিগে পনেরোটি ম্যাচের একটিও জেতেনি। সাতটা ড্র, হার আটটিতে। কলকাতা লিগের অনেক টিম বলে বলে হারিয়ে দেবে সুখবিন্দর সিংহের টিমকে। তাদের বিরুদ্ধে জিততেই কিন্তু জিভ বেরিয়ে গেল মোহনবাগানের। গুরতেজ-প্রমথেশের মতো শিক্ষানবীশ রক্ষণের সামনে হাঁসফাঁস করলেন মহাতারকা ওডাফা ওকোলি। ডাবল মার্কিংয়ের সামনে পড়ে এতটাই খারাপ অবস্থা হল গোলমেশিনের যে, গোলমুখী একটা শটও নিতে পারল না। আরও করুণ লাগল সুনীল ছেত্রীকে দেখে। বহু দিন পর আই লিগে নামা জাতীয় দলের এক নম্বর স্ট্রাইকারকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ৪-৩-৩ এর ফর্মেশনে এর মধ্যেই ব্যারেটো গোটা তিনেক সুযোগ তৈরি করলেন বটে, কিন্তু তাতে লাভ হল না। ফরোয়ার্ডদের যখন এই অবস্থা তখন রক্ষণের আনোয়ার আলি আবার পায়ের তলা দিয়ে বার দুয়েক বল গলালেন। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাই গ্যালারিতে শুধুই হাহুতাশ।
তিন কোটির ওডাফা-সুনীলের ব্যর্থতার দিনেও সবুজ-মেরুন জার্সিকে যতটুকু উজ্ব্ল দেখাল তা তিন বঙ্গ সন্তানের জন্য। কিংশুক দেবনাথ, রহিম নবি এবং জুয়েল রাজা। কিংশুক-নবি সামাল দিলেন পৈলানের সাবিথ-বিজেন্দ্র রাইয়ের দাপাদাপি। জুয়েল গেলেন বেরালেন মাঝমাঠে। অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো। কিন্তু তাতেও সবকিছু সামাল দেওয়া গেল না। মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়ল ভারসাম্যহীন টিমের কঙ্কাল চেহারা। সুরকুমার, হাদসন লিমা, রাকেশ মাসিরা যে পাতে দেওয়ার যোগ্য নয়!
আই লিগে পৈলানই একমাত্র দল যে টিমে কোনও বিদেশি নেই। অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবলারদের নিয়ে ভবিষ্যৎ জাতীয় দল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য গড়া হয়েছে অ্যারোজ। ফেডারেশন যে থিম নিয়ে দলটা গড়েছে তা কতটা সফল হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে সুখি-সুজিত-তনুময়দের টিমটার ফিটনেস যথেষ্ট ভাল হলেও, সেট পিস কার্যকর করার ক্ষেত্রে এই টিমটা শূন্য পাবে। পাহাড়ি দলগুলোর মতো তাই টিমটা সারাক্ষণ দৌড়েই গেল। গোল পেল না।
ইস্টবেঙ্গলের মতো মোহনবাগানও পরপর দু’টো সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে গেছে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর জন্য। ব্যারেটোদের পরের ম্যাচ চিরাগ কেরলের সঙ্গে। কোচিতে। যাদের অবনমন প্রায় নিশ্চিত। কোচির ওই ম্যাচে অবশ্য কার্ডের জন্য খেলতে পারবেন না কিংশুক। হ্যামস্ট্রিং-এ চোটের জন্য খেলতে চাইছেন না রহিম নবিও। কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ম্যাচ রয়েছে। তাই নবি কেরলের বিরুদ্ধে খেলতে চাইছে না।” খেতাব জেতা কঠিন। তাই সম্ভবত ৪ ফেব্রুয়ারির ফের বড় ম্যাচ জিতে সদস্য-সমর্থকদের আনন্দ দিতে চাইছেন নবিরা। যুবভারতীর গ্যালারি থেকে ড্রেসিংরুম ম্যাচের পর সেই মোক্ষ লাভের অঙ্ক নিয়েই ব্যস্ত থাকল বেশি।

মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, কিংশুক, আনোয়ার, নবি (ধনরাজন), জুয়েল, মাসি, হাদসন, ব্যারেটো (মণীশ মাথানি), সুনীল (অসীম), ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.