সেই চূড়ান্ত মন্তব্য করার সময় বোধহয় এসে গেল! টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতায় এগিয়ে থেকেও ফেডেরার অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালে নাদালের কাছে যে ভাবে ৭-৬ (৭-৫), ২-৬, ৬-৭ (৫-৭), ৪-৬ হারল, তার পর বলে ফেলতেই হচ্ছে, ওর পক্ষে আর কোনও গ্র্যান্ড স্লাম জেতা সম্ভব নয়। সামনের অগস্টে লন্ডন অলিম্পিকে সিঙ্গলসে সোনা জিততে পারলে হয়তো ওখানেই অবসর নেবে ফেডেরার।
‘বেস্ট অব থ্রি’ সেট ম্যাচে ফেডেরার এখনও ভয়ঙ্কর। মাস দুয়েক আগেই লন্ডনের ইন্ডোরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নাদালকেই একটা সেটে ৬-০ হারিয়ে ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু গ্র্যান্ড স্লামে, যেখানে যখন-তখন ম্যাচ চার-পাঁচ সেটে গড়াতে পারে, সে রকম হাড়ভাঙা খাটুনির ম্যাচ বের করে নেওয়া ফেডেরারের পক্ষে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে। বিশেষ করে টুর্নামেন্ট যত উপরের দিকে যাচ্ছে। যত ওর সামনে টেনিস-বিশ্বের বড় নাম প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির হচ্ছে।
|
মেলবোর্ন পার্কে সেটাই হল। একত্রিশ ছুঁইছুঁই ফেডেরারের কাছে টমিচ, দেল পোত্রো অবধি হয়তো এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সহজ। তিন সেটে জিতে গেলে তো ওই সব ম্যাচে ওকে আরওই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। কিন্তু যেই নাদাল সামনে পড়ল। যেই এক-একটা সেটই এক ঘণ্টার আশেপাশে গড়াল। যেই তিরিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে ২০-২৫টা শটের অনেক র্যালি চলল, ফেডেরারের বিখ্যাত টেনিস-স্কিল না হোক, ওর শরীরটা বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করে দিচ্ছে। নাদাল-ম্যাচে পরিষ্কার ক্লান্ত দেখিয়েছে ফেডেরারকে। ওর মতো সর্বোচ্চ মানের প্লেয়ারের থেকে অবিশ্বাস্য ৬৩টা ‘আনফোর্সড এরর’ হওয়ার কারণ প্রধানত ক্লান্তিই। সঙ্গে ম্যাচের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হিসেবে বলব, গত কালের মহাযুদ্ধে ফেডেরারকে ঝুলিয়েছে ওর অসংখ্য ফোরহ্যান্ড শট।
হাঁটুর অল্পস্বল্প ব্যথা সত্ত্বেও নাদালের অসাধারণ ফিটনেস, অবিশ্বাস্য রিটার্ন-ক্ষমতা, প্রথম সার্ভিসের দুর্দান্ত সাফল্যের পার্সেন্টেজের সমুচিত জবাব ফেডেরারের কাছে ছিল না। তা ছাড়া নেটের উল্টো দিকে ফেডেরারকে দেখলেই তো নাদাল নিজের খেলাকে বাড়তি উচ্চতায় নিয়ে যায়। যেটা ওর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সব ক্ষেত্রে পারে না। নাদালের (২৫) বয়স টেনিসের পক্ষে খুব বেশি না হলেও হাঁটু, গোড়ালি, কোমর, পিঠ নানান ছোটখাটো চোটে সারা মরসুম ভোগার বদভ্যাস আছে। তা সত্ত্বেও এখনও তিন-চারটে গ্র্যান্ড স্লাম মনে হয় আরামসে জিতবে। রবিবারই অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। |
ফের মুখোমুখি। ফাইনালে ওঠার পথে নাদাল ও জকোভিচ। |
জকোভিচ এ দিন ম্যারাথন পাঁচ সেটে মারেকে ৬-৩, ৩-৬, ৬-৭ (৪-৭), ৬-১, ৭-৫ হারানোর জেরে নিঃসন্দেহে ফাইনালে ক্লান্ত থাকবে। নাদালের চেয়ে জকোভিচ শুধু এক দিন কম বিশ্রামই পাবে তাই নয়। মারে-ম্যাচে ‘জোকার’কে পুরো ফিটও মনে হল না আমার। আর মেয়েদের ফাইনালে আজ শারাপোভার বিগ পয়েন্টে ‘ডাবল ফল্ট’ করার বদভ্যাসের জন্যই আমার মতে আজারেঙ্কা এগিয়ে। দু’জনেরই তবে বাড়তি মোটিভেশন রয়েছে। যে জিতবে সে-ই বিশ্বের এক নম্বর হবে।
|