ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে রবিবার গভীর রাতে খড়্গপুর শহরের খরিদার যুবক সঞ্জয় সাউকে গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ ৩ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল শুক্রবার। ধৃত তিন জনের বিরুদ্ধেই একাধিক চুরি, ছিনতাই ও খুনের অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনায় কমপক্ষে আরও ৫-৬ জন জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। তাদের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃতেরা একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। যে চক্রটি চুরি, ছিনতাইয়ে যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এমনকী বখরা নিয়ে বিবাদের জেরে দলের সঙ্গীকেও খুন করার অভিযোগ রয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। ধৃতেরা ঠিক কোন কোন দুষ্কর্মে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুষ্কৃতীদেরও ধরার চেষ্টা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, খরিদার একটি সোনার দোকানে চুরির উদ্দেশ্যেই রবিবার রাতে কয়েক জন দুষ্কৃতী হানা দেয়। কিন্তু ভুল করে সোনার দোকানের পরিবর্তে তার পাশে প্রসাধন সামগ্রীর একটি দোকানের সাটার ভাঙতে শুরু করে। শব্দে দোকানের উল্টো দিকের বাড়ির সঞ্জয় সাউয়ের পরিবারের সবার ঘুম ভেঙে যায়। তাঁরা চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করেন। ওই এলাকা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ডিআইজি-র (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বাংলো। চিৎকার শুনে পুলিশ এসে যাতে পারে আশঙ্কায় সঞ্জয়ের বাড়িতে হানা দেয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। শাবল দিয়ে দরজায় আঘাত করতেই দরজা ফুটো হয়ে যায়। সেই ফুটো দিয়ে রিভলবারের নল ঢুকিয়ে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তাতেই বছর বাইশের সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়। এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। |
ডিআইজি-র বাংলো লাগোয়া এলাকাতেই যদি নিরাপত্তা না থাকে তা হলে শহরের অন্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল কী, তা নিয়ে সোচ্চার হন এলাকাবাসী। দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু সেই ক্ষোভে ঘি ঢালে। চিৎকার শুনেও কেন পুলিশ ঘটনাস্থলে এল না, কেন দুষ্কৃতীদের ধরতে পারল না, এ-সব নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন রেলশহরের বাসিন্দারা।
খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার ও টাউন থানার আইসি স্বপন দত্তের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়। সেই দলই তদন্ত চালিয়ে খড়্গপুর শহরের রজগ্রাম এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ মান্না ওরফে হদুল, মেলু মান্না ও মেদিনীপুর শহরের অশোকনগরের বাসিন্দা রাজা সিংহকে গ্রেফতার করে। মাসচারেক আগে খড়্গপুর শহরেই এক দুষ্কৃতী খুন হয়েছিল। তাতে প্রকাশ মান্নার নাম উঠে আসে। পুলিশ তাকে এক বার গ্রেফতারও করেছিল। আবার শালবনি থানা এলাকার দু’টি জায়গা থেকে সাত মাস আগে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই জোড়া খুনের ঘটনায় রাজা সিংহ জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানায়।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “যে তিন জন খুন হয়েছিল তারাও ছিল দুষ্কৃতী। বখরা নিয়ে বিবাদের জেরেই খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছিল।” ধৃতদের বেশিরভাগেরই বয়স অল্প বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক সময়ে কলেজেও পড়ত। পুলিশ জানিয়েছে, একই সঙ্গে সকলে কলেজে যাতায়াত করত। সেই সঙ্গে চুরি, ছিনতাইয়ের ছক কষত। পরে পুরোপুরি দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ে। নিশীথকুমার মণ্ডল জানান, তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে আলোচনা-শিবির ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে। |