তৃণমূলের পুরবোর্ড থেকে সরে গেল কংগ্রেস
রাজ্যে জোট-জটিলতায় নতুন মাত্রা যোগ করল খড়গপুর। ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ এনে খড়গপুরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড থেকে সমর্থন তুলে নিল কংগ্রেস।
তৃণমূল ২০১০-এর পুর-নির্বাচনের পর থেকে ওই পুরসভার বোর্ড চালাচ্ছিল। বাইরে থেকে সমর্থন করছিল কংগ্রেস। ৩৫ আসনের পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর ১৫ জন। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে-আসা কাউন্সিলরের সংখ্যা ১২। কংগ্রেসের সমর্থন না-পেলে পুরবোর্ডে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কথা তৃণমূলের। ইতিমধ্যে আবার দুই বাম কাউন্সিলর এবং এক নির্দল কাউন্সিলর কংগ্রেস-শিবিরেই যোগ দিয়েছেন। এই মুহূর্তে তাই পুরসভায় তৃণমূল ও কংগ্রেস দু’পক্ষই ১৫-১৫। আর রয়েছেন ৪ বাম ও এক বিজেপি কাউন্সিলর। তাঁদের উপরে অনেকখানিই নির্ভর করবে বোর্ডের ভবিষ্যৎ। সমর্থন তুললেও কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য এখনই অনাস্থা আনার ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, অদূর ভবিষ্যতে কংগ্রেস অনাস্থা প্রস্তাব এনে তৃণমূলের বোর্ড ফেলে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৪ বাম কাউন্সিলরের সমর্থনও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব সমর্থন তুলে নেওয়ার কথা বললেও প্রদেশ নেতৃত্ব অবশ্য ওই পুরসভায় আপাতত অনাস্থা প্রস্তাব না-আনারই ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেছেন, “জেলা কংগ্রেস সভাপতি আমাকে ফোন করে ঘটনাটি জানান। আমি ওঁকে নির্দেশ দিয়েছি, ওখানে কোনও অনাস্থা আনা যাবে না। কারণ, তৃণমূল আমাদের জোট শরিক।” তবে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের মতো তৃণমূল স্তরে রাজনৈতিক সমীকরণ অনেক ক্ষেত্রেই উপর তলার উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর করে না।
প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশংকর পাণ্ডের বক্তব্য, “আমাদের দলের কাউন্সিলরেরা সর্বসম্মত ভাবেই তৃণমূল বোর্ড থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১৯ মাস আমরা বাইরে থেকে তৃণমূলকে সমর্থন করেছি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু অনৈতিক কাজকর্ম হয়েছে, যা সমর্থন করা যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত।” আর অনাস্থা আনা প্রসঙ্গে সরাসরি জবাব এড়িয়ে শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনা হবে।” তৃণমূলের পুর-চেয়ারম্যান জহরলাল পালের বক্তব্য, “হঠাৎ করে কেন সমর্থন প্রত্যাহার করা হল, জানি না! কেউ কেউ হয়তো শহরের উন্নয়ন চাইছেন না!”
রেল-শহরে কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক অবশ্য কোনও দিনই ‘মধুর’ ছিল না। ২০১০ সালের পুরভোটেও এখানে আলাদা ভাবেই লড়াই করে দু’দল। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের শহর খড়গপুরে কংগ্রেসের ‘প্রভাব’ বরাবরই বেশি। আগে একটানা পুরবোর্ডও ছিল তাদেরই দখলে। কিন্তু গত পুরভোটে অন্যদের থেকে বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তবে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। সেই অবস্থায় বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে তৃণমূলকে বোর্ড গড়তে সাহায্য করে কংগ্রেস। প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশংকরবাবু বলেন, “তখন কোনও শর্ত ছাড়াই তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলাম। তবে অনৈতিক কাজ হলে চুপ করে বসে থাকব না বলেও জানিয়েছিলাম। সে রকম কাজকর্ম কিন্তু চলছে। আমরা পুর-কর্তৃপক্ষকে তা নিয়ে আগে সতর্কও করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি।” কংগ্রেসের অভিযোগ, টেন্ডার হচ্ছে। অথচ কাউন্সিলরেরা তা জানতে পারছেন না। রবিশঙ্করবাবুর কথায়, “কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই। সম্প্রতি ৫ লক্ষ টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। অথচ এই সরঞ্জামে কী হল, তা কেউ জানে না!” শহর কংগ্রেস সভাপতি অমলবাবুর অভিযোগ, “উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরসভা কাজ করছে না। আমরা বেশ কয়েক বার এ ব্যাপারে পুর-কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ফল হয়নি।”
পক্ষান্তরে, পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূলের জহরলালবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “খড়গপুরে শহরে উন্নয়নে গতি এসেছে। কেউ কেউ উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছেন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করেই সব কাজ হয়।
শুনেছি ওরা (কংগ্রেস) সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু এখনও লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি। জানালে আলোচনা করে আমরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.