ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে জটিলতার নিষ্পত্তি করতে হিমসিম খাচ্ছে পুরসভা। তার জেরে গত এক সপ্তাহ ধরে শিলিগুড়ি শহরে আবর্জনা সাফাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আজ, শনিবার সরস্বতী পুজো। পুজোর দিনেও শহর সাফসুতরো হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবর্জনা জমে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শহরের আশ্রমপাড়া, হায়দরপাড়া, হাকিমপাড়া, সুভাষপল্লি, ডাবগ্রাম, ঘোঘোমালি, ভারতনগর, প্রধাননগর, দেশবন্ধুপাড়া, এমনকী, খোদ জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্তের ওয়ার্ডেও। |
সাধারণ বাসিন্দারা তো বটেই, কংগ্রেসও সিপিএমের কাউন্সিলরদের অনেকেই দুষছেন সাফাই বিভাগকেই। কংগ্রেস নেতাদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, এক মেয়র পারিষদের কাজে আরেকজন বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তাহলে শহরের বাসিন্দাদের তো ভোগান্তি হবেই বলে ওই নেতাদের মত। সিপিএমের শিলিগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (সাফাই) মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, “ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা তো কবেই পুঁটিমারিতে জমি নিয়েছি। আগে তো তৃণমূলের বাধায় ওখানে করতে পারিনি। তাতেও শহরে জঞ্জাল জমেনি। ওঁদের নিজেদের গোলমালের জন্য শিলিগুড়িবাসী ভুগবেন কেন? এটা চলতে পারে না। মানুষ এটা মেনে নেবেন না।” বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ছ’মাসের মধ্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মিটিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। নয়া সরকার গঠনের পরে সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ডনবসকো স্কুলের সামনে থেকে তা সরানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই এলাকায় জঞ্জাল ফেলতে দিচ্ছেন না। সাত দিন হয়ে গেলেও বিকল্প কী হবে তা এখনও পুরসভা স্পষ্ট করে তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ। সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “৭ দিন ধরে যে বর্জ্য সাফাই আটকে রয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করা হচ্ছে। ২ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” মেয়র পারিষদের ওই আশ্বাসে অবশ্য সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা। তাঁদের প্রশ্ন, “সাত দিন ধরে শহরের নানা এলাকায় জঞ্জাল জমে রয়েছে। তাহলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হচ্ছেটা কী? আর দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তার গ্যারান্টি কী?” |
ওই বাসিন্দাদের সাফ কথা, এমন চলতে থাকলে তাঁরাই রাস্তায় নামবেন। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিষ্ণু গোস্বামী বলেন, “বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ হচ্ছে না। এমন চলতে দিতে পারি না।” পুরসভা সূত্রের খবর, বাসিন্দাদের ক্ষোভের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এদিন পুরসভার কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পরে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “শহরে সাফাইয়ের পরিষেবা স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে ওই বিভাগকে আজ, রাত থেকেই কাজে নামতে বলা হয়েছে। যে বাসিন্দারা আন্দোলন করছেন তাঁদের বোঝানো হয়েছে। শীঘ্রই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্পের জন্য দরপত্র ডাকা হবে।” ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের সংগঠন সচেতনতা জাগরণ কমিটির সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “২ মাস সময় দিয়েছি। তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না-নিলে বড় ধরনের আন্দোলন হবে।”
|
পুরসভার বৈঠক এবং জঞ্জালের ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |