গ্রামে চিতাবাঘ ঢুকেছে খবর পেয়ে, তাকে দেখার আশায় বেরিয়ে পড়েছিলেন তহিদুল ইসলাম। খেয়াল করেননি, ঘরের দরজাটা খোলা ছিল। বেশ কিছু ক্ষণ ঘুরেও চিতাবাঘের দেখা না পেয়ে তহিদুল বাড়িতে ফিরতেই তাঁর উপরে হামলা করল সেই চিতাবাঘ। শুক্রবার সকালে ডুয়ার্সের মালবাজার শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নেওড়া-মাঝিয়ালি গ্রামের ওই ঘটনায় তহিদুল-সহ জখম হলেন ৬ জন। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টার পরে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে চিতাবাঘটিকে ধরে বন দফতর। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তাকে গরুমারার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে এক জন মালবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ (২) বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএফও কল্যাণ দাস বলেন, “পশু বিশেষজ্ঞ চিতাবাঘটিকে দেখেছেন। চিতাবাঘটির বয়স ছয়। পূণর্র্বয়স্ক, পুরুষ। ওর শরীরে কোনও আঘাত ছিল না।” ডিএফও জানান, নেওড়া-মাঝিয়ালি গ্রামে লাগোয়া জঙ্গলে চিতাবাঘ রয়েছে। সেখান থেকেই কোনও কারণে চিতাবাঘটি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল। বন দফতর সূত্রের খবর, মাঝিয়ালির কাছেই শোনগাছি চা বাগানে কয়েকদিন আগে একটি চিতাবাঘ দেখা গিয়েছে বলে খবর মিলেছিল। এটি সেই জন্তুটিও হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। |
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এ দিন নেওড়া-মাঝিয়ালির বাসিন্দারা খবর পেয়েছিলেন গ্রামে চিতাবাঘ ঢুকেছে। কিন্তু সে কোথায় রয়েছে, বুঝতে পারেননি কেউ। ঘরের দরজা খোলা রেখেই চিতাবাঘ দেখতে বেরিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তহিদুল ইসলাম। চিতাবাঘের দেখা না পেয়ে সকাল ৭টা নাগাদ বাড়িতে ফেরেন। ঘরে ঢুকতেই চৌকির নীচ থেকে বেরিয়ে চিতাবাঘটি ঝাঁপিয়ে তহিদুলের উপরে। আঁচড়ে-কামড়ে দেয় তাঁকে। কোনও মতে ঘর থেকে বেরিয়ে ‘চিতাবাঘ, চিতাবাঘ’ বলে চেঁচাতে-চেঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালান তহিদুল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চিতাবাঘটি এক-দু’বার বেরোতে চেষ্টা করলেও চারপাশে ভিড় দেখে ফের ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে।
বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ মালবাজার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনকর্মীরা। সে সময়ে বেরিয়ে এসে গ্রামবাসী আবিউল ইসলাম, আগ্নু ওরাওঁ, সহিদুল ইসলাম, পাপ্পু মহম্মদকে জখম করে আবারও ঘরে ঢুকে পড়ে চিতাবাঘটি। তহিদুলের দরমার ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে সেই সময় বনকর্মীরা ২ রাউন্ড ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ চিতাবাঘটি বাইরে বেরোতেই ফের ঘুমপাড়ানি গুলি করেন বনকর্মীরা। গুলি গায়ে বিঁধতেই স্থানীয় একটি দোকানের কর্মচারী কৈলাস থাপার ঘাড়ে-পিঠে থাবা বসিয়ে দেয় চিতাবাঘটি। ১৪ বছর বয়সী কৈলাসই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চিতাবাঘ বেরিয়েছে খবর পেয়ে এ দিন ওই এলাকায় পৌঁছে যান কিছু পর্যটক। কল্যাণী থেকে আসা কল্লোল দে, সাথী দে’রা বললেন, “গরুমারা জঙ্গলে ঘুরে চিতাবাঘের দেখা পাইনি। এ ভাবে লোকালয়ে চিতাবাঘ দেখতে পাব, ভাবতে পারিনি!” |