মহিলা ভোটাররা সংখ্যায় মণিপুরি পুরুষদের আগেই হারিয়েছেন। এ বার হারাতে না পারলেও, এত বেশি মহিলা প্রার্থীও কিন্তু আগে দেখেনি মণিপুর। কিন্তু দিন বদল হবে কী? প্রমীলা বাহিনীর ক্ষমতাদখল নয়, বিধানসভায় দল নির্বিশেষে মহিলাদের সংখ্যাধিক্য হবে কিনা তা নিয়েও তেমন আত্মবিশ্বাসী নন তাঁরা। তবে সব আন্দোলনে কী ভাবে মহিলাদের এগিয়ে দিয়ে পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে পুরুষরা সরে পড়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যেই তোপ দাগছেন নেত্রীরা। মনোরমা-শর্মিলার রাজ্যের ভোটচিত্রে এটুকুই যা অন্য আলো।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়ছেন মহিলা প্রার্থী। বিরোধী দলনেতার সঙ্গেও লড়াই আর এক মহিলারই। মোট ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৮১৩ জন ভোটারের মধ্যে ৮,৮৯,৪৯৭ জন মহিলা ভোটার। মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১৬। গত বার সংখ্যাটা ছিল ৬। কিন্তু মহিলারা জিতবেন কী না তা এবারেও ঠিক করবে পুরুষরাই। অন্তত রাজ্যের নেত্রীদের তাই মত। আগে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়েছেন এখানকার মেয়েরা। এখন স্বদেশি শাসক, সেনা, জঙ্গি ও দারিদ্র্যের সঙ্গে অবিরাম লড়াই। কিন্তু মণিপুরি মেয়েরা ক্ষমতার অলিন্দে উপেক্ষিতাই। গত নিবার্চনে খাংগাবক ও থৌবাল আসনে জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি তাঁর স্ত্রী লালধনী দেবীকে খাংগাবক আসনটি ছেড়ে দেন। বিধানসভায় তিনিই এখন শিবরাত্রির সলতে। এতদিন পর্যন্ত মাত্র চারজন মহিলা প্রার্থী বিধানসভায় জিতেছেন। মন্ত্রী হয়েছেন একমাত্র লেইমা দেবী, প্রথম মহিলা সাংসদ কিম গাংতে।
তৃণমূলের প্রদেশ সভানেত্রী কিমের সময় তিনি ছিলেন একমাত্র মহিলা প্রার্থী। কিমের কথায়, তাঁকে প্রচার চালাতে দেওয়া হয়নি। এমন কী নির্বাচনের দিন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। ধর্মপ্রাণা খ্রিষ্টান গাংতে বলেন, “মেয়েরা ছেলেদের মত আগ্রাসী নই। আমরা গড়তে চাই। আমরা বাঁচাতে চাই। আমরা হিংস্র হয়ে উঠতে পারি না। সমাজ মেয়েদের কাছ থেকে সব সুবিধা চায়, প্রতিবাদ স্থলেও আমরাই সামনে থাকি। কিন্তু ক্ষমতা দেওয়ার বেলায় সেই সমাজই পিছিয়ে আসে।” পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি এমএ, প্রাক্তন অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ঘোষিকা কিম বলছেন, “এ বারে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসে মেয়েদের উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন। চানুর সঙ্গে দেখা করেছেন। আর তা নিয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংহ যা নোংরামি করছেন, তাতেই পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির মনোভাব প্রমাণিত।” মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সমাজবিদ এম সি অরুণের প্রশ্ন, “মেয়েরা নিজেদের পছন্দমতো ভোট কী দেন? না কী পুরুষ অভিভাবক যাকে ভোট দিতে বলেন তাঁকেই দেন? একজন মহিলা বিধায়কও যদি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেন, সেটা পুরুষের নির্দেশে চলা ৫ জন মহিলা বিধায়কের চেয়ে বেশি কাম্য।”
মহিলা প্রার্থী জিতবে না ধরে নিয়ে এনসিপি মহিলা প্রার্থী দেয়নি। দলের সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাধাবিনোদ কৈজাম বলেন, “আরে বাবা মহিলারা প্রার্থী হতে চাইছেন কই? আর লড়ছি আসন জিততে। মহিলারা না জিততে পারলে তাদের লড়িয়ে লাভ কী?”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়া ওইনাম ইন্দিরা এত
সহজে জমি ছাড়তে রাজি নন। খোদ ইবোবির দুর্গ, থৌবালে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন, “ইবোবি এই এলাকায় বহিরাগত। ওঁকে ছুঁড়ে ফেলুন। স্বামীর কথায় নয়, নিজের পছন্দে ভোট দিন।” ৪২ বছরের ইন্দিরা, ১৬ বছর ধরে সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত। স্বপ্ন ছিল ‘নোবেল পাবেন’, তবে ‘বড়দের কথায়’ স্বপ্ন মুলতুবি রেখে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। মহিলা রোজগার যোজনা নিয়ে কাজ করে ইতিমধ্যেই ৩২০০ মহিলাকে নিয়ে ৩৮৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী খুলিয়েছেন ইন্দিরা। ইউএনডিপি, ডিউক অফ এডিনবরা ও জাতীয় যুব পুরস্কারে সম্মানিত ইন্দিরার সংস্থার হস্তশিল্প বিদেশে রফতানি হয়।
এ হেন মহিলা দাপটের সঙ্গেই বলতে পারেন, “দরকার হলেই মণিপুরি পুরুষ সমাজ মেয়েদের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে আন্দোলনের সামনে এগিয়ে দেয়। কাজ ফুরোলেই আর আমাদের চিনতে পারে না। মেয়েরাও হয়েছেন তেমন। মেয়েদের সমর্থন করেন না, ভোটও দেননা। অন্তত এই বার নিজেদের বিবেকের কথা শুনে ভোট দিন।” তাঁর প্রতিশ্রুতি, ভোটে জিতলে নারী ও শিশুকল্যাণে আলাদা অর্থ বরাদ্দের জন্য লড়ে যাবেন।
কংগ্রেসও ইন্দিরার পাল্টা হিসেবে বিরোধী দলনেতা, এমপিপি প্রার্থী ওক্রাম জয়ের বিরুদ্ধে ওয়াইখন শ্যামাকে দাঁড় করিয়েছে। শ্যামাও বলছেন, “জিতলে মহিলাদের দাবি নিয়ে বিধানসভায় গলা ফাটাব। পরিবর্তন আনতেই হবে।”
|