কয়েক ঘণ্টার মণিপুর সফরে রাজ্য-রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সফর শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাজ্যের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। মুখ্যমন্ত্রী পদে এক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইবোবি পশ্চিমবঙ্গের ন’মাসের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কালকের শিশু’ আখ্যা দেন! এখানেই থেমে না থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও তুললেন ইবোবি। কংগ্রেসের অভিযোগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল। ইবোবির আনা জঙ্গি-যোগের অভিযোগ ওড়ানোই শুধু নয়, রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে ইবোবিকে নিজের বক্তব্যের ‘প্রমাণ’ দিতে বলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা এই প্রথম দলের হয়ে ভোটপ্রচারে অন্য কোনও রাজ্যে এলেন। এবং এই সফরে স্থানীয় পুলিশকে কার্যত অগ্রাহ্য করে, কোনও রকম প্রোটোকলের তোয়াক্কা না করেই বন্দি ইরোম শর্মিলা চানুর সঙ্গে দেখা করতে চলে যান মমতা। সঙ্গে নিয়ে যান সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদেরও। চানুর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে তিনি জনসভার উদ্দেশে রওনা দেন। পথে অনেক মহিলাই ‘দিদি’ ‘দিদি’ বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মমতার সভার পরে রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় বেশ বড় সভাই করেছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাড়া জাগানো’ মণিপুর সফর অস্বস্তি বাড়িয়েছে ইবোবির। এমনিতেই এ বারের ভোট তাঁর কাছে আদৌ মসৃণ নয়। বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়েছে। একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠীও এ বারের ভোটে কংগ্রেসকে বয়কটের জিগির তুলে মাঠে নেমেছে। কংগ্রেস প্রার্থীদের প্রচারে পদে পদে বাধা তৈরি করছে তারা। বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো কংগ্রেস বিরোধিতায় নতুন সংযোজন তৃণমূল কংগ্রেস ও নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিওর দল নাগা পিপল্স ফ্রন্ট। তার মধ্যে ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেত্রী হয়েও মণিপুর সফরে এসে ইবোবি সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে দুর্নীতি ও রাজ্যের অবস্থা নিয়ে মমতা সরব হয়েছেন, তাতে বিস্তর চটেছেন ইবোবি।
তৃণমূলের জনসভার পর, বুধবার রাতেই ইম্ফলের কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন ইবোবি। সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গাইখাংগাম ও দলীয় পর্যবেক্ষক তথা অসমের শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ইবোবি বলেন, ‘‘মমতা কালকের শিশু! বেশি কথা বললেই হল? কী জানেন মণিপুরের? এখানকার রাস্তাঘাট, অনুন্নয়ন নিয়ে কথা বলার আগে মমতা কি খোঁজ নিয়েছেন, আমরা কত উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণ করেছি? ১২০ দিন ব্যাপী অর্থনৈতিক অবরোধে রাজ্য যখন ধুঁকছিল, তখন মমতা কোথায় ছিলেন?”এর পরেই মমতার দলের সঙ্গে জঙ্গি যোগের অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি ও হিমন্ত।
মণিপুরে সন্ত্রাস মিটিয়ে দেওয়ার যে আশ্বাস মমতা জনসভায় দিয়েছিলেন, তাকে কটাক্ষ করে ইবোবিরা পাল্টা বলেন, এনপিএফ ও জঙ্গিদের সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাত রয়েছে! তাই জঙ্গিরা কংগ্রেসের প্রার্থী-নেতা-কর্মীদের আক্রমণ করলেও তৃণমূল বা এনপিএফকে আক্রমণ করছে না। ইবোবি রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেন, “মমতা-রিও গোপন আঁতাত করে মণিপুর দখলের ছক কষছে। এদের থেকে সাবধান!” ইবোবির অভিযোগ উড়িয়ে বৃহস্পতিবারই পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ সভানেত্রী কিম গাংতে ও পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী জানান, ক্ষমতা তাকলে অভিযোগের প্রমাণ দিন ইবোবি। কিমের কথায়, “এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যে কেউ এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা ভাবতে পারছি না। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করব।”
|