‘আধার’ নিয়ে সমঝোতা চিদম্বরম ও নিলেকানির
ভিন্ন পরিচয়পত্র এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি তৈরির কাজ একই সঙ্গে চলবে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আপাতত সমঝোতায় পৌঁছলেন পি চিদম্বরম ও নন্দন নিলেকানি। দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্য ‘ইউনিক আইডেন্টিটি কার্ড’ বা অভিন্ন পরিচয়পত্র তৈরির ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। কর্পোরেট জগৎ থেকে নন্দন নিলেকানির মতো পেশাদারকে নিয়ে এসে সেই প্রকল্পের মাথায় বসিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মনমোহনের অন্য অনেক সংস্কার কর্মসূচির মতোই এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও যোজনা কমিশনের বিরোধিতা। নিলেকানির সংস্থা ঠিকমতো কাগজপত্র যাচাই না করেই পরিচয়পত্র বিলি করায় ভবিষ্যতে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে চিদম্বরম আপত্তি তুলেছিলেন। ইউপিএ সরকারের মধ্যে অনেকেই যেমন এ বিষয়ে চিদম্বরমের যুক্তিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, তেমনই প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও নিলেকানির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং রাহুল গাঁধী। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুই যুযুধান শিবিরকে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার রাস্তায় আনতে পেরেছেন মনমোহন।
নন্দন নিলেকানির নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি’-র দায়িত্ব ছিল, অভিন্ন পরিচয়পত্র তৈরি করে সব নাগরিককে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা। প্রাথমিক ভাবে ২০ কোটি মানুষের জন্য এই আধার-সংখ্যা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় নিলেকানিকে।
নামধামের পাশাপাশি সকলের ‘বায়োমেট্রিক ডাটা’ (যেমন আঙুলের ছাপ) নেওয়া হয়। আজ ঠিক হয়েছে, নিলেকানি এপ্রিল মাস থেকে আরও ৪০ কোটি নাগরিকের জন্য আধার-সংখ্যা তৈরির কাজ শুরু করবেন। এ জন্য অতিরিক্ত ৫৭৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
ছবি: পিটিআই
চিদম্বরমকে সন্তুষ্ট করতে নিলেকানিও মেনে নিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে সব প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেগুলি তিনি দূর করার চেষ্টা করবেন। নিলেকানির তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন চিদম্বরম। তাঁর যুক্তি ছিল, এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল এমনিতেই ‘জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি’ বা জনগণনার কাজ করছে। নিলেকানির সংস্থা যেখানে এক জন নাগরিক সম্পর্কে পাঁচ রকম তথ্য সংগ্রহ করছে, সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক এক জন নাগরিকের ১৫ রকম তথ্য সংগ্রহ করছে। ফলে একই তথ্য দু’বার সংগ্রহ বা অর্থের অপব্যয়ও হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন, তা বোঝাতে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নিলেকানি-মন্টেককে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন চিদম্বরম। তিনি বলেন, “যে ১৬টি রাজ্যে আধার-কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে, তার বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই সব তথ্য ও বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করবে।
কিন্তু ওই ১৬টি রাজ্যে ইতিমধ্যেই আধার-কর্তৃপক্ষ যাদের ‘বায়োমেট্রিক ডাটা’ সংগ্রহ করেছে, তাদের ক্ষেত্রে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি তাদের আধার-সংখ্যাটি জেনে নেবে।” এর ফলে একই তথ্য দু’বার সংগ্রহ ও তার জন্য অর্থের অপব্যয় যতটা সম্ভব কমানো যাবে বলেই মনে করছেন চিদম্বরম। তবে যেখানে নিলেকানির সংস্থার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্যের গরমিল দেখা যাবে, সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্যই নেওয়া হবে। কারণ জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জিতে সমস্ত তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক। নিলেকানি বলেন, “চিদম্বরম নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলি একেবার সঠিক। আগামী দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে এই বিষয়গুলি পর্যালোচনা করা হবে।”
আপাতত দুই শিবিরের সমঝোতায় স্বস্তি পেলেন মনমোহন সিংহ। সকলের জন্য অভিন্ন পরিচয়পত্র ও আধার-সংখ্যা তৈরির মাধ্যমে আর্থিক সংস্কারের পথেই হাঁটতে চেয়েছিলেন তিনি। আধার-সংখ্যা তৈরি হলে তার ভিত্তিতেই দেশের মানুষের কাছে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া যাবে। ভর্তুকির বহর কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে এবং গণবণ্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতি কমাতেও সুবিধা হবে। উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে এ কথাই বলছেন রাহুল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.