প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা-মুখ খুলে গেল উত্তরেও
ঞ্চলিক শক্তির ক্ষমতা খর্ব করে উভয়েরই উদ্দেশ্য উত্তরপ্রদেশে তাঁদের হৃত জমি পুনরুদ্ধার করা। হিন্দি বলয়ের সব থেকে বড় এই রাজ্যে পুনরুজ্জীবনের সেই আশাতেই আজ ‘পপুলিজম’ তথা জনমোহিনী রাজনীতির প্রতিযোগিতায় গা ভাসাল সর্বভারতীয় রাজনীতির যুযুধান দুই দল বিজেপি ও কংগ্রেস। ছাত্রদের কম মূল্যে ট্যাবলেট-ল্যাপটপ থেকে শুরু করে কৃষকদের এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুবের ব্যাপারে যেমন ভোট ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি জানাল বিজেপি। তেমনই কংগ্রেসের ‘দিশা প্রস্তাবে’ ঘোষণা করা হল, ক্ষমতায় এলে ৮ বছরে কুড়ি লক্ষ যুবকের নতুন চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এবং এরই সঙ্গে আরও গুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বার্তা দিল উভয়েই। ভোটে এমন ঢালাও প্রতিশ্রুতির বহর এত দিন মূলত দেখা গিয়েছে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। এ বার তা উত্তরেও।
বেলা ১২টা নাগাদ লখনউয়ে আজ বিজেপি-র ইস্তাহার প্রকাশের তিন ঘণ্টার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের দশ শহরে একযোগে দিশা প্রস্তাব প্রকাশ করে কংগ্রেস। তবে প্রতিযোগিতা শুধু এতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এ-ও মজার বিষয় যে, পরস্পরের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ভাষাও ছিল একই, “ওঁরা তো ক্ষমতায় আসবে না। তাই ঢালাও প্রতিশ্রুতিতে বাধা কোথায়! স্বপ্নের পোলাওয়ে যত পারো ঘি ঢালো!”
উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেসের ‘দিশা প্রস্তাব’প্রকাশে সলমন খুরশিদ। ছবি: পি টি আই
একার ক্ষমতায় লখনউয়ের তখ্ত দখলের প্রকাশ্য প্রত্যয় দেখালেও বিজেপি বা কংগ্রেস কারও মনেই সেই আত্মবিশ্বাস নেই। বরং তামাম প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস এই যে, উত্তরপ্রদেশে এ বার ত্রিশঙ্কু হবে। সে ক্ষেত্রে জোট সরকার গঠন হলে পৃথক ভাবে কোনও দলের ভোট ইস্তাহারের প্রাসঙ্গিকতা কমবে। তৈরি হবে যৌথ কর্মসূচি। কিন্তু সেই সম্ভাবনার আঁচ পেলেও কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েরই আপাতত লক্ষ্য উত্তরপ্রদেশে শক্তি বাড়ানো। কেন্দ্রে তথা সর্বভারতীয় স্তরে আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার জন্য যা কি না গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই উত্তরপ্রদেশের মন পেতে এ বার উভয়েই মরিয়া।
বস্তুত, নির্বাচনী ইস্তাহারে ‘পপুলিজমের’ রাজনীতির রমরমা এত দিন স্রেফ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতেই সীমিত ছিল। এ বার সেই ছোয়াঁচ উত্তর ভারতেও লেগেছে। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ ভোটে সমাজবাদী পার্টির ইস্তাহার প্রকাশ করে ল্যাপটপ, সাইকেল, ঋণ ইত্যাদি ঘোষণা করেছেন মুলায়ম সিংহ। আজ তার থেকেও এক কাঠি উপরে উঠতে চেয়েছে বিজেপি। এমনকী, প্রকাশিত ইস্তাহারে যা রয়েছে, সাংবাদিক বৈঠকে তার থেকেও বাড়িয়ে-চড়িয়ে ঘোষণা করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে কংগ্রেসের দিশা প্রস্তাব তুলনায় কিছুটা সংযত। দলের শীর্ষ নেতাদের কথায়, বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই তা করা হয়েছে।
কিন্তু এ-ও ঠিক যে, কংগ্রেস এর পরেও একটি ইস্তাহার প্রকাশ করবে। দিশা প্রস্তাবের মাধ্যমে আপাতত একটি বৃহত্তর ছবি তুলে ধরে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে “ক্ষমতায় এলে ২০২০ সালের মধ্যে নতুন উত্তরপ্রদেশ গঠন করবে কংগ্রেস।”
দুই জাতীয় দল আজ যে ঘোষণা করেছে তার তুল্যমূল্য খতিয়ান এই রকম-
• লোকসভায়, বিধানসভায় এবং সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি অবশ্য মহিলাদের জন্য রাজ্যে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাতাবরণ সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে দরিদ্র মহিলাদের স্বনির্ভর প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব দিয়েছে কংগ্রেস।
• রাজ্যের তাঁতিদের জন্য কংগ্রেসের দিশা প্রস্তাবে ৩ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের প্রস্তাবের মোকাবিলায় তাঁতিদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি।
• তবে কর্মসংস্থানের বিষয়টিতে কংগ্রেসকে ‘টেক্কা’ দিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের প্রস্তাব, আগামী আট বছরে কুড়ি লক্ষ যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে তাদের সরকার। কিন্তু তার পাঁচ গুণ অর্থাৎ এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বিজেপি-র ইস্তাহারে।
• আবার সংখ্যালঘু ও উচ্চবর্ণের ভোট পেতে কংগ্রেস-বিজেপি-র রাজনীতির প্রতিফলনও ঘটেছে উভয়ের প্রস্তাবে। উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু মন পেতে তাদের যথাসম্ভব সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কংগ্রেস। বিপরীতে উচ্চ বর্ণের মন পেতে সংখ্যালঘু সংরক্ষণে আপত্তি জানিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণের প্রত্যয়ও জানানো হয়েছে ইস্তাহারে। এ ছাড়াও ছাত্র, কৃষক, দলিতদের জন্য উভয়েই আজ ঢালাও ঘোষণা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সব প্রতিশ্রুতি পূরণ বা পালনের সুযোগ উত্তরপ্রদেশের মানুষ কাকে দেন, এখন সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.