নির্বাচনে লড়তেই মানা করে আডবাণীর প্রতি বার্তা ভাগবতের
লের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা তো দূর অস্ৎ, লোকসভা নির্বাচনেও যাতে আর না লড়েন, লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।
এর আগে সঙ্ঘ প্রধানের পক্ষ থেকে বর্ষীয়ান নেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন আর প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী না হন। বরং পরবর্তী প্রজন্মের কোনও নেতার জন্য সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি যেন দলের ‘মেন্টর’-এর কাজ করেন। এ কথা আডবাণীকেই ঘোষণা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আডবাণী শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলেননি, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নেই। বরং সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, দল চাইলে এই পদ নিতে তাঁর আপত্তি নেই। সে দিক থেকে মোহন ভাগবতের এই বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, আডবাণী যদি প্রার্থীই না হন, তা হলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও কার্যত নেই বললে চলে।
প্রশ্ন হচ্ছে, লোকসভা ভোটের এখনও তো প্রায় আড়াই বছর বাকি। তা হলে এখনই এই নিয়ে এত তাড়াহুড়ো কেন করছে সঙ্ঘ?
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, সঙ্ঘ আসলে আডবাণীর কাছে একটি বার্তা স্পষ্ট করে দিতে চায়। তা হল, তাঁর আর দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবং সেটা তারা আরও আগে থেকেই করার চেষ্টা করছে। এ বার মোহন ভাগবত সেই লক্ষ্যে চাপ আরও বাড়াতেই আডবাণীকে জানালেন, তাঁর ভোটে লড়াও চলবে না। বস্তুত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এখন থেকেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটকে তারই মহড়া হিসেবে দেখছেন অনেকে। তাই এই পাঁচ বিধানসভা ভোট নিয়ে ব্যস্ততার তলে তলে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভার গুটি সাজানোও। বিজেপির অভ্যন্তরীণ এই টানাপোড়েনও তারই লক্ষণ।
সঙ্ঘের শীর্ষ সূত্রের মতে, আডবাণীকে এই বার্তা পাঠানোর পিছনে আরএসএস নেতৃত্বের ভাবনা স্পষ্ট। তাঁরা চান, বিজেপি এখন দলের রাশ নবীন প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিক। আর প্রবীণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাক। সঙ্ঘ সূত্রেই বলা হয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনেও আডবাণীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা হয়েছিল। সুতরাং সুযোগ তাঁকেও দেওয়া হয়েছে। আবার বিজেপির সাফল্যের পিছনে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে আডবাণীর অবদানের কথাও স্বীকার করছেন তাঁরা। কিন্তু বাজপেয়ী এখন অসুস্থ। আডবাণীরও বয়স হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ‘মেন্টর’-এর ভূমিকাই পালন করুন, চাইছে সঙ্ঘ।
রথযাত্রায় বেরনোর আগে ভাগবতের সঙ্গে আডবাণী যখন নাগপুরে দেখা করতে যান, সেই সময়ও সরসঙ্ঘচালক একই কথা জানিয়েছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রথযাত্রায় আপত্তি না করলেও কোনও ভাবে যেন বিষয়টি তাঁর প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার দৌড়ের সঙ্গে দেখা না হয়, সেটি আডবাণীকেই স্পষ্ট করতে বলেছিলেন ভাগবত। তার পরেই গডকড়ীর বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে আডবাণী বলেন, “জনসঙ্ঘ ও বিজেপির থেকে আমি যা পেয়েছি, তা প্রধানমন্ত্রীর পদের থেকেও অনেক বেশি।” কিন্তু সে দিন বা পরেও আডবাণী কখনও সরাসরি বলেননি, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই। এখন তাই আরএসএস নেতৃত্ব চাইছেন, আডবাণী যেন আর ভোটেই না লড়েন। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, জিন্না বিতর্কের সময় বিজেপিরই কিছু নেতা আডবাণীর অপসারণ চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগবত সেই সময় আডবাণীকেই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করার পরামর্শ দেন। তা সত্ত্বেও সেই সময় আডবাণী নিজের অবস্থানে অনড় থেকে সঙ্ঘ ও বিজেপির একাংশের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। চাপটা শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই। পরে অবশ্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করেই লোকসভা ভোটে লড়ে বিজেপি। কিন্তু এর পর আর দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চাইছেন না সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
প্রশ্ন হল, তা হলে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বিজেপির কাকে ভাবা হচ্ছে?
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী এই পদের জন্য নরেন্দ্র মোদীর নাম নেওয়ায় নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সঙ্ঘ নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, মোদীর যোগ্যতা থাকলেও তাঁকে বাগে রাখা মুশকিল। উত্তরপ্রদেশের ভোট বৈতরিণী পার হওয়ার জন্য গডকড়ী নিয়ে এসেছেন সঞ্জয় জোশীকে। তাতে মোদীর গোঁসা হয়েছে। সে জন্য তিনি প্রচারেও যাচ্ছেন না। দিল্লিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও আসেননি। অথচ মোদীর মাপের নেতা অনায়াসে সঞ্জয় জোশীকে উপেক্ষা করতে পারতেন। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, এই পরিস্থিতিতে গডকড়ীর মতো নেতার উপরে অনেকটা ভরসা রাখছেন ভাগবত।
বিজেপির উপরে সঙ্ঘের প্রভাব কায়েম রাখতে ও সংগঠন মজবুত করতে গডকড়ীর মতো নাগপুরের নেতাকে সভাপতি করেছেন ভাগবত। এ বছরের শেষে সভাপতি হিসাবে গডকড়ীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আরএসএস নেতৃত্ব চাইছেন, সংবিধান সংশোধন করে মেয়াদ আর এক বার বাড়ানো হোক। এর আগে রাজনাথ সিংহ সভাপতি থাকার সময় এক বার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সঙ্ঘ আপত্তি তুলেছিল। এ বার কিন্তু ভাগবতের পছন্দের নেতা গডকড়ীর মেয়াদ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করা পর্যন্ত কোনও কিছু নিয়ে বড় আপত্তি নেই সঙ্ঘের।
যদিও ভাগবত সেই বিষয়টি বিজেপির হাতেই ছেড়ে দিতে চান। বিজেপি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বরং সঙ্ঘ নেতৃত্ব সাহায্য করতে পারেন। গডকড়ীও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদের দৌড়ে তিনি নেই। মোদী, অরুণ জেটলি থেকে সুষমা স্বরাজ যে কেউ এই পদের প্রার্থী হতে পারেন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বিজেপিকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.