বইমেলা এ বার অনেক বেশি পরিকল্পিত, সাজানো, পরিচ্ছন্ন। উত্তর-পশ্চিম দিকে কিছুটা জায়গা ছাড়া ১৮ একর বিস্তৃত মেলা প্রাঙ্গণে ছড়ানো প্রায় সাতশো স্টল নকশা মিলিয়ে খুঁজে নিতে অসুবিধা হয় না।
কিন্তু বইয়ের মেলায় ঢুকতেই ‘অ-বইয়ের’ পসরা কেন? এক বা দু’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলে হঠাৎ কেউ বুঝতেই পারবেন না যে তিনি বইমেলায় ঢুকেছেন। মেলায় ঢোকার প্রধান গেট ওই দু’টি। ঢুকতেই আয়কর দফতরের ঝাঁ চকচকে বিশাল মণ্ডপ। ওই চত্বর জুড়ে কেবলই অ-বইয়ের ছড়াছড়ি। বইয়ের দেখা মিলবে আরও একটু পিছনে।
মিলন মেলা ভবনের উত্তরে ও গিল্ড অফিসের দক্ষিণ আর পূর্বে শুধুই অ-বইয়ের ভিড়। খবর-সিরিয়ালের চ্যানেলগুলোর রমরমা। চলছে সরাসরি সম্প্রচারও। কেউ প্রশ্নোত্তরের আসর বসিয়েছে। সবই ক্যামেরার সামনে। ফলে বিস্তর ভিড়। শুক্রবার মেলায় ভিড় একটু কম থাকলেও টিভি চ্যানেলের স্টলগুলোর সামনে লাইন ছিলই।
লেখালেখির সঙ্গে নিশ্চয়ই সম্পর্কিত, তাই বলে কলম নির্মাতা কোম্পানির আস্ত স্টল থাকবে বইমেলায়? বিক্রি হচ্ছে অডিও-ভিডিও সিডি। একটি স্টলে চিনেমাটির ডিজাইনার টি-সেটের পসরা। অনলাইন পণ্য বিক্রির কয়েকটি স্টলও রয়েছে ওই চত্বরে। সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে চিকেন বিরিয়ানি। যদিও মেলার উত্তর প্রান্তে রয়েছে স্থায়ী খাদ্য-অঙ্গন ‘ফুড প্লাজা’। মেলায় ঢোকার মুখে অ-বইয়ের এই বিস্তৃতি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের পরিকল্পনা মতোই। |
গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আগে এরা মেলার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। তাতে বই বিক্রির অসুবিধা হত। তাই ওদের এক জায়গায় আনা হয়েছে।” ত্রিদিববাবু জানালেন, অ-বই স্টলের সংখ্যা এ বার অনেক কমানো হয়েছে। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, ওদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ, প্রকাশক বা পুস্তক বিক্রেতাদের চেয়ে ওদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যায় অনেক বেশি। টাকা যে ওরা অনেক বেশি দেয় তা অবশ্য গিল্ডের সম্পাদক স্বীকার করেছেন।
এ দিকে, নানা স্টলে শুরু হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। আমেরিকার স্টলে এ দিন হাজির হয়েছিলেন মহিলা-শিল্পী ট্রেসি লি স্টাম। তিনি রাস্তায় চক দিয়ে সবচেয়ে বড় ছবি এঁকে গিনেস রেকর্ড করেছেন। তিনি মেলার মাঠে আঁকছিলেন গাঁধীর বিশাল ত্রিমাত্রিক ছবি। শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আমেরিকান সেন্টারের ডিরেক্টর জেফ রেনো জানালেন, ছবি আঁকা শেষ হবে আজ, শনিবার। সুইডেনের লেখক-সাংবাদিক জান মিরডালের লেখা ‘রেড স্টার ওভার ইন্ডিয়া’ প্রকাশিত হল এ দিন। বিষয় ভারতের মাওবাদী আন্দোলন। প্রকাশিত হল হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা বিস্মৃত এক নায়কের জীবন কাহিনী ‘নেতাজির সেপাই নিতাই মণ্ডল’। প্রকাশিত হয়েছে ‘কবিতীর্থ’ পত্রিকা। ওঁদেরই বই গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের উপন্যাস ‘আমার স্মৃতির বিষাদ গণিকারা’ এ বার বেরোলো মেলায়। |