ইতিহাসের দর্পণে শহরকে ফিরে দেখল সাহিত্যের জলসা
লকাতা সাহিত্য উৎসবে এসে এক বার নয়, তিন বার জেম্স প্রিন্সেপের কথা তুললেন উপিন্দর সিংহ। কে না জানে, ওই ইংরেজ পুরাতাত্ত্বিকের নামেই এই শহরের প্রিন্সেপ ঘাট।
এই শহরেই তদানীন্তন ‘বেঙ্গল আর্মি’র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেরেমিয়া অবার্টের কন্যা হ্যারিয়েট সোফিয়া অবার্টকে বিয়ে করেছিলেন প্রিন্সেপ। এবং সেই বিয়ের পাঁচ বছর পরে ভগ্নস্বাস্থ্যে মাত্র ৪১ বছর বয়সে লন্ডনে মৃত্যু। “প্রিন্সেপ না-থাকলে ব্রাহ্মী অক্ষর পড়া যেত না। ১৮৩৭ সালে সম্রাট অশোককেও আবিষ্কার করা যেত না,” বললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কন্যা। তাঁর সঙ্গে একমত ‘ইন্ডিয়া: এ হিস্ট্রি’র লেখক, ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জন কে। জন জয়পুর সাহিত্য উৎসব হয়ে এই শহরে এসেছিলেন, কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উপিন্দর জয়পুর যাননি। তিনি শুধু কলকাতায়।
ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় ‘প্রাচীন ভারতের পুনরাবিষ্কার’ শীর্ষক এক অধিবেশনে বসেছিলেন জন এবং উপিন্দর। প্রিন্সেপ, কানিংহাম এবং পুরাতত্ত্বের কথা ছাড়াও ২০১৪ সালে কলকাতার জাদুঘরের আসন্ন দুশো বছর পূর্তির কথাও তোলেন সঞ্চালক। এশিয়ার প্রথম জাদুঘর।
কলকাতা সাহিত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিন আর এক ‘বাঙালি’র কথা তুলেছিলেন ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দকৃষ্ণ মেহরোত্রা। তিনিও জয়পুর হয়েই এসেছেন। “সরোজিনী নাইডু না-থাকলে চিনা কবিতার সঙ্গে ইয়েট্সের পরিচয় ঘটত না,” বললেন তিনি। অরবিন্দ শহরে আছেন, কিন্তু জন কে আজ, শনিবারই রওনা দিচ্ছেন লন্ডন। “কলকাতায় অনেক দিন বাদে এলাম। পার্ক স্ট্রিট আর গ্র্যান্ড হোটেলের ফুটপাথ সে রকমই আছে?” জিজ্ঞাসা করছিলেন তিনি।
কলকাতা সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে বিক্রম শেঠ। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র
এ ছাড়াও এ দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে ছিলেন পাকিস্তানের মহম্মদ হানিফ, কলকাতার সন্তান কুণাল বসু। দু’জনেই জয়পুর-ফেরত। ‘জাপানিজ ওয়াইফ’-এর লেখক কুণালের ‘দ্য ইয়েলো এম্পারার্স কিওর’ সবে প্রকাশিত হয়েছে। সিফিলিসের ওষুধ খুঁজতে এক পর্তুগিজ ডাক্তারের চিন সফর নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের এই নতুন উপন্যাস।
দ্বিতীয় দিনের ‘কলম’ বা ‘কলকাতা লিটারারি মিট’-এর টুকরোটাকরা এই রকমই। প্রজাতন্ত্র দিবসের বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও বিক্রম শেঠ। জয়পুর এবং রুশদি-ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত ছিল বিক্রমের উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই: “ভিডিও-লিঙ্কও করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন, আমি কার কথা বলছি। ঈশ্বর এবং তাঁর দূতের কিন্তু কোনও মাস্তানের প্রয়োজন নেই।” তার আগে ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিডিং রুমে চার্লস ডিকেন্সের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন তিনি।
আর সেই অনুষ্ঠানে খোশমেজাজে শিশুদের সঙ্গে কথোপকথনে মেতেছিলেন বিক্রম। “আমি তো ছেলেবেলায় প্রথম কমিক্সের মাধ্যমে ডিকেন্স পড়েছিলাম,” বললেন তিনি। এক শিশুর প্রশ্ন: তুমি কে? “আমি পাশের রাস্তায় হাঁটছিলাম, সঞ্চালক আসেননি বলে উদ্যোক্তারা আমাকে ধরে এনেছেন। আমার নাম বিক্রম শেঠ, বই লিখি বলেই বোধ হয় ওঁরা আজ আমাকে পাকড়াও করে আনলেন,” মজা করে বললেন বিক্রম। বাটানগরের ছেলে শহরে রয়ে গিয়েছেন। সাহিত্য উৎসবের শেষ দিন, আগামী ৩১ জানুয়ারি মঞ্চে তিনি এবং তাঁর মা লীলা শেঠ।
এ দেশের হাইকোর্টে প্রথম মহিলা মুখ্য বিচারপতি লীলা। তাঁর প্রথম সন্তান জন্মেছিল কলকাতার বিলুপ্ত এলগিন নার্সিং হোমেই। সেই সময়ে ‘শেষের কবিতা’য় বুঁদ লীলা ছেলের নাম রেখেছিলেন অমিত। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির নিয়ম, প্রথম ছেলের নাম রাখতে হবে ‘V’ দিয়ে। ছোট্ট অমিত তাই হয়ে গেল বিক্রম শেঠ!
নস্টালজিয়া, কলকাতা এবং সাহিত্য তিন নিয়েই জমে উঠছে কলকাতার প্রথম সাহিত্য উৎসব!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.