কলকাতায় বাড়ি বাড়ি চিঠি
ব্রিগেডকে সামনে রেখে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ চেষ্টায় সিপিএম
রাজ্যের মধ্যে রাজধানী কলকাতাতেই সাংগঠনিক শক্তিতে তুলনামূলক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে সিপিএম। ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে সেই ‘দুর্বলতা’ কাটানোর চেষ্টায় নেমেছে কলকাতা জেলা সিপিএম।
সিপিএমের আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ। ওই সমাবেশে কলকাতার অন্তত দু’লক্ষ মানুষকে সামিল করতে বাড়ি বাড়ি চিঠি দিচ্ছে সিপিএম। সেই চিঠিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, হাসপাতালে শিশুমৃত্যু, ফসলের দাম না-পেয়ে কৃষক এবং বেতন না-পেয়ে পরিবহণ শ্রমিকের আত্মহনন, শিক্ষক-আক্রমণ ছাড়াও সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা তুলে ধরা হবে। কলকাতা জেলার অন্যতম নেতা রবীন দেব শুক্রবার বলেন, “ব্রিগেডকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি।”
দীর্ঘ কাল পরে রাজ্যের বিরোধী শক্তি হিসাবে ব্রিগেড সমাবেশ করছে সিপিএম। সমাবেশ যাতে ‘ফ্লপ’ না-করে, তার জন্য কলকাতা জেলা বিশেষ উদ্যোগী। শুধু লোক দিয়েই নয়, অর্থ দিয়েও এ বারের রাজ্য সম্মেলনকে ‘সফল’ করে তোলার চেষ্টা করছে কলকাতা জেলা কমিটি। রবীনবাবু জানান, এই জেলায় ২১ হাজার সদস্য দু’দিনের আয় পার্টি তহবিলে দান করবেন। যার পরিমাণ ২২ লক্ষ টাকা। প্রত্যেক এলাকায় পথসভা, দেওয়াল লিখন ও হাতে-লেখা পোস্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হবে। টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার শেষের দিকে হাতে-লেখা পোস্টার উঠে গিয়েছিল। পুনরায় সিপিএম তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। রবীনবাবু স্বীকার করেছেন, দলের প্রতি কর্মীদের ‘নিষ্ঠা’ বাড়াতেই এই উদ্যোগ।
সাধারণত দলের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই অন্তত এক বার ব্রিগেড সমাবেশ করা হয়। বিগত যে ক’টি রাজ্য সম্মেলন কলকাতা বা পাশ্ববর্তী জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্রিগেড সমাবেশ করেছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু এ বার কলকাতা জেলা যে ভাবে ব্রিগেড সমাবেশ ‘সফল’ করতে উঠে পড়ে লেগেছে, তা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। অতীতে ’৮৯ সাল এবং ’৯৬ সালের ২১ জানুয়ারি (কংগ্রেসের নেত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেড সমাবেশের পরে) গত ১৬ বছরে কলকাতা জেলা সিপিএম ‘নিজের ক্ষমতায়’ ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজন করেনি। এই সময়কালে প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকেই ব্রিগেডে বেশি লোক আসত। এ বার পার্শ্ববর্তী জেলার ভূমিকা থাকলেও মূলত কলকাতা থেকে লোক আনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল আসার ব্যাপারে যাতে ‘প্রশাসনিক সমস্যা’ দেখা না-দেয়, তার জন্য পুলিশের কাছে আগাম অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এমনকী, ব্রিগেড সমাবেশের জন্য সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অসুবিধা হতে পারে বলে এ দিনই আগাম ‘ক্ষমা’ চেয়েছেন রবীনবাবু।
গত তিন বছর ধরে লোকসভা-পুরসভা-বিধানসভা প্রতিটি নির্বাচনেই কলকাতায় সিপিএম চরম বিপর্যস্ত। লোকসভা তো বটেই, বিধানসভাতেও রাজ্যের রাজধানী থেকে কোনও প্রতিনিধি নেই বামেদের। অথচ কলকাতায় ৩০% বস্তি এলাকা। সব মিলিয়ে কলকাতায় প্রায় ৪০-৪৫% মানুষ দরিদ্র। কিন্তু বামেদের ভোট ক্রমেই কমছে। এ ব্যাপারে জেলা সম্মেলনে আলোচনার পরে ‘নিবিড় জনসংযোগে’র উপরে জোর দেওয়া হয়। ব্রিগেড যাওয়ার জন্য বাড়ি বিড়ি চিঠি দেওয়া ছাড়াও অর্থ-সংগ্রহের জন্য পথে নামছে সিপিএম।
রবীনবাবুর বক্তব্য, অতীতেও ব্রিগেড সমাবেশের আগে তাঁরা বাড়ি বাড়ি চিঠি দিয়েছেন। পুরভোট, বিধানসভা নির্বাচনেও বাড়ি বাড়ি বামফ্রন্টের আবেদন পৌঁছে দিয়েছিলেন সিপিএমের কর্মীরা। কিন্তু তার কোনও ‘সুফল’ মেলেনি। এ বার কি ‘ফল’ পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন? রবীনবাবুর জবাব, “আমরা মানুষকে ৩২ বার চিঠি দিয়েছি। ২৯ বার ভোটে জিতেছি। তিন বার হেরেছি। আমাদের বক্তব্য নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়াই আমাদের নীতি। সেটাই করা হচ্ছে।”
কলকাতায় রাজ্য সম্মেলন চলাকালীন তিন দিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কলেজ স্কোয়ার ও ধর্মতলায়। এ ছাড়া, বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছে। কলকাতা জেলা সিপিএমের দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য সম্মেলন হবে। এই ভবনকে প্রয়াত জ্যোতি বসুর নামে এবং রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চকে হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের নামে নামকরণ করা হয়েছে। দলের এই দুই প্রয়াত নেতাই কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সৌর্হাদ্যে’র সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের আমলে সে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দলেরই একাংশের প্রশ্ন, সম্মেলন স্থল ওই দুই নেতার স্মৃতিতে নামকরণের মাধ্যমেও কি কারাটকে কোনও বার্তা দিতে চায় আলিমুদ্দিন?
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.