ট্রেনে ডাকাতের হামলা, বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু
লন্ত ট্রেনে ডাকাতেরা ভাইয়ের উপরে চড়াও হয়েছে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন দাদা। ডাকাতেরা তাঁকে রেয়াত করেনি। গুলিতে তাঁর মাথা ফুঁড়ে দিয়ে, লুঠপাট শেষ করে নেমে পড়ে চলন্ত ট্রেন থেকে। ট্রেনের কামরার মধ্যেই পড়ে থাকেন সুখচাঁদ শেখ (৩০) নামে চেন্নাই ফেরত ওই যাত্রী। প্রবল রক্তক্ষরণে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি।
সুখচাঁদের সহযাত্রীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে আপ রামপুরহাট-বারহাড়োয়া ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রাজগ্রাম স্টেশনে পৌঁছলে ‘দায় এড়িয়েছিলেন’ রেল কর্তৃপক্ষ। স্টেশন ম্যানেজারের ‘পরামর্শ’ ছিল, ‘আপনারা বরং পাকুড় স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ জানান।’ কেন? রাজগ্রামের স্টেশন ম্যানেজার মনোজ সাউয়ের বক্তব্য, “রাজগ্রামে রেল পুলিশ থাকে না। তাই হাওড়া কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কথা বলে ওঁদের দেহটি পাকুড়ে নিয়ে যেতে বলি।” গভীর রাতে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় স্টেশনে রেল পুলিশ দেহটি নামায়। সুখচাঁদের সহযাত্রীরা ডাকাতির অভিযোগ দায়ের করেন।
সুখচাঁদ শেখ
ওই খুনের ঘটনা এবং যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ডিআরএম (হাওড়া) পার্থসারথি মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “কোনও মন্তব্য করব না।” তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জংসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর এসেছে। রেল-পুলিশ তদন্তেও নেমেছে।” এই ঘটনায় চলন্ত ট্রেনে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও এক বার প্রশ্নের মুখে পড়ল বলে ক্ষোভ যাত্রীদের একাংশের।
ময়না-তদন্তের পরে এ দিন দুপুরেই সুখচাঁদের দেহটি মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জ এলাকার ন’পাড়া গ্রামে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। হাওড়া রেলপুলিশের সুপার মিলনকান্তি দাস শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান। মিলনকান্তিবাবু বলেন, “ওই ট্রেনে মুরারই পর্যন্ত পুলিশ থাকে। তার পরে থাকে না। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।”
বুধবার দুপুরে চেন্নাই-গুয়াহাটি সুপার-ফাস্ট ট্রেনে মুর্শিদাবাদে তাঁদের বাড়ি ফিরছিলেন সুখচাঁদ ও তাঁর সঙ্গীরা। মাস দু’য়েক আগে জনা দশেক গ্রামবাসীর সঙ্গে সুখচাঁদও রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ে। ঠিক করেছিলেন, পাকুড় স্টেশনে নেমে ভ্যান-রিকশা ভাড়া করে ফিরবেন দশ কিলোমিটার দূরে ন’পাড়ায়। কিন্তু ট্রেনে টিকিট পরীক্ষকের কাছে তাঁরা জানতে পারেন, সুপারফাস্ট ওই ট্রেনটি পাকুড় স্টেশনে দাঁড়ায় না। সুখচাঁদেরা তাই ঠিক করেন, বীরভূমের রামপুরহাট স্টেশনে নেমে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে পাকুড়ে যাবেন। রামপুরহাটে নেমে ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ধরেন তাঁরা।
সুখচাঁদের সঙ্গেই চেন্নাই গিয়েছিলেন তাঁর মাসতুতো ভাই কিরণ শেখ। কিরণ জানান, গভীর রাতে মুরারই স্টেশন থেকে ট্রেন ওঠে চার যুবক। বছর ত্রিশ বয়স। তাঁর কথায়, “আমাদের পাশেই ফাঁকা সিটে বসে ওরা। ট্রেন ছাড়তেই স্বমূর্তি ধরে। এক জন এসে আমার কলার ধরে বলে ‘রুপিয়া নিকাল’। সুখচাঁদদা সিটে শুয়ে ছিলেন। ওরা আমার কলার ধরতেই উঠে বসেন। তার পরে ‘ধর তো ব্যাটাদের’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক ডাকাতের উপরে।
প্রথমে থতমত হয়ে গেলেও ডাকাতটা চাদরের আড়াল থেকে পিস্তল বের করে দাদার থুতনির নীচে চেপে ধরে গুলি চালিয়ে দেয়। মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় গুলি।” ট্রেনের কামরাতেই লুটিয়ে পড়েন সুখচাঁদ। দুষ্কৃতীরা ছোরা, পিস্তল উঁচিয়ে সকলের কাছ থেকে কেড়ে নিতে থাকে টাকাকড়ি। কিরণের অভিযোগ, তাঁদের ৭টি মোবাইলও ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা।
সুখচাঁদের পকেটে ছিল ১৬ হাজার টাকা। তা-ও বের করে নেয় ডাকাতেরা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ‘অপারেশন’ সেরে বাঁশলই সেতুর আগে ট্রেনের গতি কমতেই তারা নেমে পড়ে একে-একে।
সুখচাঁদের আর এক সঙ্গী খাইরুল শেখ বলেন, “ডাকাতদের পরনে ছিল ফুলপ্যান্ট, সোয়েটার। গায়ে চাদর। মুখ থেকে মাথা ঢাকা মাফলারে। ভাঙা বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে কথা বলছিল ওরা।” তাঁর ক্ষোভ, “ডাকাতির পরে আমরা চিৎকার করলেও কোনও রেল পুলিশ বা রেলকর্মীর দেখা পাইনি। উল্টে রাজগ্রাম স্টেশন থেকে আমাদের বলা হয়, এখানে নয়, পাকুড় চলে যান।”
এ দিন ভোরে সুখচাঁদের মৃত্যুর খবর ন’পাড়া গ্রামে পৌঁছয়। সকালে গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল, সুখচাঁদের মা লুৎফা বিবি মাঝে-মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। বছর দুই হল বিয়ে হয়েছিল ওই যুবকের। বছরখানেকের একটি মেয়েও রয়েছে। তাঁর স্ত্রী নিলিয়ারা বিবি এক টানা আওড়ে চলেছিলেন, “বড্ড বদরাগী ছিল জানেন। ও বলে গিয়েছিল, আর মাথা গরম করবে না। কথা রাখল কই?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.