নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
গ্রামের আরাধ্য দেবতা ক্ষেত্রপাল। সরস্বতী পুজোর পরে মাঘী সপ্তমী বা মাকুড়ি সপ্তমীতে পূজিত হন তিনি। আর তাঁর পুজো ঘিরেই দীর্ঘ কয়েক দশক আগে থেকে সরস্বতীর আবাহনে মেতে ওঠে কাটোয়ার বনকাপাশি গ্রাম। তবে বনকাপাশির কাটোয়ার তিন গ্রাম-- মূস্থুলি, আমডাঙা ও ঘোড়ানাষও প্রতি বছর মেতে ওঠে বাগদেবীর আরাধনায়।
জেলা জুড়ে বনকাপাশি ‘শোলাগ্রাম’ হিসেবেই পরিচিত। দুর্গা পুজোর আগে থেকেই গ্রামের প্রত্যেক পুরুষ-মহিলা ব্যস্ত হয়ে পড়েন দেবীর জন্য শোলার সাজ তৈরিতে। যা চলে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত। সরস্বতী পুজোর পরে ক্ষেত্রপাল পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামের সকলে। উৎসব ঘিরে গ্রামে আসেন আত্মীয়স্বজনেরা। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারাধন মুখোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শোলা শিল্পী আশিস মালাকারেরা বলেন, “ক্ষেত্রপাল উৎসব ঘিরে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে পুনর্মিলন হয়। আত্মীয়দের উৎসাহেই দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সরস্বতী পুজো শুরু হয়। তবে এখন পুজোর জাঁকজমক অনেক বেশি।” |
বনকাপাশি গ্রামে ৬টি পাড়ায় প্রায় ৩৫টি পুজো হয়। তার মধ্যে ১২টি পুজো উল্লেখযোগ্য। গ্রামে দেবী থাকেন চার দিন। তার পরে শোভাযাত্রা সহকারে দেবী যান বিসর্জনের পথে। পুজোর ক’দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। এ বছর উপলক্ষে আমরা ক’জন ক্লাবের থিম ‘স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশত বর্ষ’। নতুনপাড়া পুজো কমিটি মণ্ডপে উঠে এসেছে গ্রাম্য সংস্কৃতি। বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব ও নেতাজি সঙ্ঘের মণ্ডপসজ্জা পুরনো বাড়ির আদলে। পাশাপাশি সব্যসাচী সঙ্ঘ ও প্রতিবাদ ক্লাব আলোকসজ্জাতেই নজর কাড়বে, দাবি উদ্যোক্তাদের।
তবে শোলাগ্রামে শোলার সাজ থেকে ‘ব্রাত্য’ দেবী। এ প্রসঙ্গে পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, “এখানকার শিল্পীরা বিভিন্ন জায়গায় দেবীকে সাজিয়ে বাড়ি ফেরেন পুজোর দিন দুপুরে। সে কারণেই গ্রামে দেবীকে আর আর শোলার সাজে সাজানো হয় না।” তবে শোলা শিল্পী আশিস মালাকার বলেন, “সম্ভবত শোলা দিয়ে দেবীকে সাজানোর রেওয়াজ নেই। তাই কেউ আমাদের ডাকে না।”
অন্য দিকে, তাঁতিদের গ্রাম মুস্থুলি, আমডাঙা ও ঘোড়ানাষে সরস্বতীর আরাধনা হয় বেশ জাঁকজমকভাবেই। তিন গ্রামের প্রায় ৩০টি পুজো হয়। এ বছর মূস্থুলি গ্রামে নাইস ক্লাবের প্রতিমার উচ্চতা ২২ ফুট। বিসর্জনের দিন গ্রামের সবুজ সঙ্ঘের মূল আকর্ষণ ভাঙরা নাচ। মাদার স্মৃতি সঙ্ঘের আকর্ষণ রায়বেঁশে। এ দিকে ২৯টি পুতুল দিয়ে ‘থাকা’ তৈরি করেছে আমডাঙা গ্রামের বাঘাযতীন ক্লাব।
প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু দেবীর আগমনের অপেক্ষা। |