শুরু থেকেই অডিট হয়নি, প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অডিট হয়নি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। আর তা নিয়েই শোরগোল শুরু হয়েছে এত দিন পড়ে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই প্রতি বছর নিয়ম করে অডিট হওয়ার কথা। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যালের মতো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এত দিন তা হয়নি কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলেই। কলেজ সূত্রে খবর, গত নভেম্বরে এজি (অডিটর জেনারেল) বেঙ্গলের দফতর থেকে একটি চিঠি আসে কলেজ-অধ্যক্ষের কাছে। দ্রুত অডিট করাতে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দেওয়া হয়ে ওই চিঠিতে। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট সকলে। সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন শুদ্ধোধন বটব্যাল। নতুন অধ্যক্ষ প্রথমেই অডিট নিয়ে ‘তৎপরতা’ শুরু করেছেন। কলেজের একাংশ আধিকারিক-কর্মচারী তার ফলেই তটস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, অডিট হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ‘অস্বচ্ছতা’ ধরা পড়তে পারে। তা হলে অনেকের চাকরি বা পদাধিকার নিয়ে টানাপোড়েনও শুরু হতে পারে। আর তাতেই শোরগোল শুরু হয়েছে। তবে অডিট করানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেডিক্যালের নতুন অধ্যক্ষ।
আট বছর আগে, ২০০৪ সালে পঠনপাঠন শুরু হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। আগে এক বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগেই এই কলেজ-ভবন গড়ে উঠেছিল। ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব হায়ার এডুকেশন’ নামে ওই সংস্থার চেয়ারম্যান সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। ২০০২ সালের ২৫ জুন সেই ভবন রাজ্য সরকারকে হস্তান্তরিত করা হয়। তার পরেই মেডিক্যালের পঠনপাঠনের উদ্যোগ শুরু হয়। কলেজে প্রতি বছরই কয়েক লক্ষ টাকার কাজ হয়। এ জি বেঙ্গলের অডিট হলে এ-সব ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা’ থাকে বলে মত একাংশ আধিকারিকের। কিন্তু, গত আট বছর ধরে তার কোনও বালাই-ই ছিল না। অভিযোগ, বামফ্রন্টের আমলে অডিট করানোর ক্ষেত্রে ‘তৎপর’ হননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনও নির্দেশও আসেনি। রাজ্যে পালাবদলের পর গত নভেম্বরেই তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতি-র কাছে এ জি বেঙ্গলের দফতর থেকে একটি চিঠি আসে। যেখানে দ্রুত অডিট করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই চিঠি পেয়েই নড়েচড়ে বসেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকুমারবাবু বলেন, “ওই চিঠি আসার পরেই এ জি বেঙ্গলের অডিট করানোর উদ্যোগ শুরু হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হয়।” তাঁর কথায়, “এ জি বেঙ্গলের অডিট না-হলেও ইন্টারন্যাল অডিট হয়েছে।” ‘অস্বচ্ছতা’র অভিযোগ এড়াতে দ্রুত এজি বেঙ্গলের অডিট করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কলেজ সূত্রে খবর। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকদের শুরুতেই সে কথা বলেছি।” তাঁর বক্তব্য, আগেই এই অডিট করানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। কলেজের এক আধিকারিক বলেন, “কোন প্রকল্পে কত টাকা খরচ হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কোনও গরমিল রয়েছে কি না, এ জি বেঙ্গলের অডিট হলেই তা স্পষ্ট হবে। কিন্তু, এত দিন এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।” তাঁর কথায়, “এখন অবশ্য অডিট করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের নানা কাজের ক্ষেত্রেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। অডিট হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” |