আজ পরিদর্শন রায়গঞ্জে
ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্য অধিকর্তা
র পর শিশুমৃত্যুর ঘটনার জেরে মালদহ জেলা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্র পরিষদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপতি। বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের নানা ওয়ার্ড-অফিস ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। শিশু বিভাগ থেকে বার হওয়ার সময়ে স্বাস্থ্য কর্তার সামনে দাঁড়িয়ে পুরাতন মালদহের রসিলাদহ গ্রামের জারিনা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আটদিন ধরে আমার ১৯ দিনের বাচ্চা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ডাক্তারবাবুরা কিছুই বলছিল না। কাল রতে ডাক্তারবাবু ছুটি দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে বললেন। সকালে আমার শিশুটি মারা গেল।” সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেন তিনি। তার পরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “ওই শিশুর ওজন এতটাই কম ছিল ফলে ওকে বাঁচানো যেত না।”
মৃত শিশুদের পরিবারের বিক্ষোভ রায়গঞ্জ হাসপাতালে। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
ওই হাসপাতালে একে পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে, তার উপরে লাগোয়া বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও অসুস্থ শিশুরা আসছে বলে স্বাস্থ্য কর্তা জানিয়েছেন। ওই সময়ে হাসপাতালের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদের। ছাত্র নেতারা হাসপাতালে ‘দালাল-চক্র’, ‘ফাঁকিবাজ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী’ রয়েছে অভিযোগ তুলে দ্রুত পরিষেবার হাল ফেরানোর দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি, রায়গঞ্জ হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনার পরে সেখানকার বেহাল দশা সরেজমিনে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, “মালদহ ও রায়গঞ্জ দুটি হাসপাতালের পরিষেবার মান বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মালদহ লাগোয়া কয়েকটি হাসপাতালের মানও বাড়ানো হচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি মালদহ সদর হাসপাতালে ৯৭৪ টি শিশু ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তার দাবি, “গত বছর একই সময়ে শিশু মৃত্যুর হার বেশি ছিল।” কিন্তু, গত বছর ওই সময়ে কটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল তা স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলতে পারেননি। তবে তিনি জানান, হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঠিকমতো ডিউটি করেন কি না তা খতিয়ে দেখতে নথিপত্র তলব করা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা রায়গঞ্জ হাসপাতালে যাবেন। এ দিন রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পরিদর্শনের পরে উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন সুনীলকুমার ভৌমিক বলেছেন, “গত ২০ ডিসেম্বর আমরা হাসপাতালের শিশুবিভাগ পরিদর্শন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু হাল ফেরেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতার জেরে শিশু বিভাগে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ওই বিভাগে চিকিৎসক ও বেডের অভাব। চিকিৎসকেরা ঠিক মতো রোগীদের দেখছেন না।

মালদহ হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্তা

ছাত্র বিক্ষোভ।
তাঁরা শিশুদের নার্সিংহোমে রেফার করছেন। শিশুবিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিক পরামর্শ দিয়েছি। কমিটির তরফে স্থায়ীভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।” কমিটির তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শিশুবিভাগটি নিয়মিত পরিস্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে! যতদিন না শিশুবিভাগের পুরনো ভবন সংস্কার করে বেড না বাড়ানো হচ্ছে তত দিন অতিরিক্ত শিশুদের হাসপাতালের বন্ধ হয়ে থাকা আই ব্যাঙ্কে রেখে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে! পাশাপাশি, চিকিৎসকেরা ঠিকমতো পরিষেবা না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই বিষয়েও কমিটির তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে পর পর তিনটি শিশুর মৃত্যুর পর রায়গঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হন মৃতদের পরিবারের লোকজন। সে দিনই একসঙ্গে ১৫ জন শিশুকে অন্যত্র রেফার করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে তদন্তের নির্দেশ দেন জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “কমিটির সদস্যদের পরামর্শ আমরা খতিয়ে দেখছি। খুব শীঘ্রই সরকারি উদ্যোগে শিশু বিভাগের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হবে। শিশু বিভাগে রোগীর আত্মীয়দের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.