রাতারাতি বন্ধ রাজ্যের একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অভিনব লকআউট। ক্রীড়া দফতরের চূড়ান্ত খামখেয়ালিপনায় রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টার। যা কুড়ি বছর ধরে চলছিল। সাই-তে স্পোর্টস মেডিসিনের শাখা থাকলেও নেতাজি ইন্ডোরের সেন্টারটি পূর্ণাঙ্গ ছিল।
কোনও আলোচনা ছাড়াই এক মিনিটের মধ্যে সেই সেন্টারকে বাতিল করে দেওয়া হল অভিনব রাস্তায়। সেন্টারের প্রধান ডাক্তার নিশীথরঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে হঠাৎই দেখা হয়েছিল রাজ্য ক্রীড়া দফতরের এক আমলার। নিশীথবাবুকে তিনি বলেন, “১ তারিখ থেকে সেন্টার বন্ধ করে দিন। এই ভাবে চলবে না।” কোনও লিখিত নির্দেশ আসেনি, বলা হলে আমলার উত্তর, “এই তো জানিয়ে দিলাম।” |
কমনওয়েলথ গেমসে পদক জয়ী, এভারেস্ট জয়ী, ইংলিশ চ্যানেল জয়ী অনেক বঙ্গসন্তান এই সেন্টারে এসে ট্রেনিং নিতেন। ছোট দলের যে কোনও ফুটবলার বা ক্রিকেটার এসে দেখে নিতেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন। ডাক্তারদের সঙ্গে মনোবিদ, পুষ্টিবিদ সবাই কাজ করতেন, যা বাংলার ক্রীড়া মহলে দেখাই যায় না। গত বাম সরকার এই সেন্টারের উন্নয়নে কিছু করেননি। জনা সাতেক ডাক্তার মিলিয়ে ১৫ জন কর্মী কাজ করতেন এখানে। প্রায় বিনা মাইনেতে। ডাক্তাররা পেতেন দিনে ২০০ টাকা। ভেবেছিলেন, নতুন সরকারের জমানায় পরিবর্তন হবে।
পরিবর্তন সত্যি সত্যিই হল। বন্ধ হয়ে গেল। নেতাজি ইন্ডোরে অন্য ঘরে গবেষণা চলছে, রাজ্যের একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টারে এখন কাফেটেরিয়া হবে কি না। মজার ব্যাপার, সেন্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র নিজেই। জড়িয়ে রয়েছেন অনেক ফুটবলার। তাঁরা সবাই আড়ালে মদনবাবুর মনোভাবকে দুষছেন। ক্রীড়ামন্ত্রী হয়ে মদন বলেছিলেন, এই সেন্টারের উন্নতি করবেন। এ দিন সেন্টারের প্রধান, ফিফার মেডিকেল অফিসার নিশীথ চৌধুরী মন্ত্রীকে ফোন করলে তিনি বলেন, “আগে ওটা বন্ধ করুন। ছয় মাস পরে দেখব, কী করা যায়।”
বামফ্রন্ট সরকার কিছুই করেনি দেখে ডাক্তাররা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ থেকে প্রচুর যন্ত্রপাতি এনেছিলেন সেন্টারের জন্য। নিজেদের উদ্যোগে। একটা বিশেষ ট্রেডমিলের দামই প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। যা সাইতেও নেই। এই যন্ত্রপাতিগুলোর কী হবে, তা ভেবে ডাক্তাররা চিন্তিত। কমিটিতে জড়িত ফুটবলাররাও।
ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর, এই সেন্টার চালানোর জন্য বেশি টাকা খরচ হচ্ছে বলে নাকি এই সিদ্ধান্ত। ঘটনা হল, সেন্টার চালাতে গত ছয় মাসে খরচ হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সেন্টারের সঙ্গে জড়িত অনেকের অভিযোগ, সরকারি খাতে এই সেন্টারের পিছনে মাসে সাত লাখ টাকা দেখানো হয়। কিন্তু সেই টাকা খরচ হয়ে যায় অন্য খাতে। মন্ত্রীরা জানতেও পারেন না, কোথায় কত টাকা যাচ্ছে।
রাজ্যের ক্রীড়া কাঠামো অতি বিশ্রী অবস্থায়। যুবভারতীর ট্র্যাক বদলানো হয়নি ২৭ বছরেও। একটা স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক মানের নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কসবার রাজডাঙায় নতুন স্টেডিয়াম হয়েছিল। সেই স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন তালাবন্ধ। কোনও খেলা হয় না। এত ছোট, সেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে না। এই অবস্থায় রাজ্যের একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টার রাতারাতি বন্ধ হওয়ায় ক্রীড়া মহলেই নানা প্রশ্ন।
|