এক বছর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফের ধসা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ধূপগুড়ি এবং ফালাকাটার বিঘার পর বিঘা আলুর খেতে। গত বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় রোগ ছড়াতে পারেনি। তাতে উৎসাহী হয়ে চাষিরা বিপুল পরিমাণে আলু চাষ করেন। আবার তাতে লোকসানের মুখে পড়েন অধিকাংশ চাষিই। এবার সেই লোকসান পুষিয়ে দাম দাম মেলার আশায় বিঘার পর বিঘা আলু চাষ করেন চাষিরা। চাষিরা জানাচ্ছেন, গাছ খানিকটা বড় হতেই ধসা শুরু হয়েছে। সরকারি হিসাবে ফালাকাটা ও ধূপগুড়ি ব্লকে ২৫ শতাংশ আলু খেতে ধসার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বহু খেতের গাছ নষ্ট পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে। ফালাকাটা ব্লকে দেওগাঁ, গুয়াবরনগর, জটেশ্বর, ছোট শালকুমার ও ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি, গাদং, বারোঘড়িয়া, ঝাড়আলতা গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধসার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান, ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে অধিকাংশ চাষিই চাষ করেছেন। সকাল বেলা খেত ঠিকঠাক থাকলেও বিকালে ধসা রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে। গাছ ধসা রোগে আক্রান্ত হয়ে নুইয়ে পড়ছে। জমি বাঁচাতে অনেকেই আগাম ওষুধ প্রয়োগ শুরু করেছেন। অনেক সময়ই তা কাজ করছে না। ব্লক কৃষি দফতরের কর্মীরা এখনও আসেননি। |
ফালাকাটায় রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি। |
দিশেহারা চাষির পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষি দফতর। দুই ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট ছড়ানো হবে। সেখানে ধসা রোগ নিরাময় করতে আলু খেতে কি ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা লিফলেটে উল্লেখ করা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। দফতরের কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফালাকাটা ব্লকের কৃষি আধিকারিক আবুবক্কর সিদ্দিকি এবং ধূপগুড়ির আধিকারিক দেবাশিস সর্দার বলেন, “আবহাওয়ার কারণ তো আছেই। এ ছাড়া ঠিকঠাক বীজ শোধন না করায় আলু ধসায় আক্রান্ত হচ্ছে। দফতরের কর্মীরা গ্রামে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ব্লক মিলিয়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে এ বার আলু উপাদন হচ্ছে। প্রথম ধাপে ডিসেম্বর মাসে আলুর ফলন ঠিকঠাক হয়। দ্বিতীয় ধাপের জন্য যাঁরা বীজ বুনে চাষ করছেন, তাঁদের জমিতেই আলু খেত ধসায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবহাওয়া। টানা কুয়াশা, মেঘলা আকাশ থাকায় ধসার প্রবণতা বেড়েছে। ছোঁয়াচে রোগের মত এক জমি থেকে অপর জমির গাছগুলি আক্রান্ত হচ্ছে। দিশেহারা কৃষকরা ওষুধ কিনে জমিতে স্প্রে করলেও অনেক ক্ষেত্রে গাছ বাঁচাতে পারছেন না। হরিনাথপুর গ্রামের কৃষক দেবব্রত সরকার বলেন, “৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এবার খরচও ব্যাপক হারে বেড়েছে। দুই দিন ধরে গাছ নুইয়ে পড়ছে। ধসা রোধ করার জন্যও অনেকে খরচ করছেন। কিন্তু অনেকেই গাছ বাঁচাতে পারছেন না।” |