ট্রেনে বা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আগুন জ্বালানো বেআইনি। কিন্তু সে কথা কেউ শোনেন না বলেই অভিযোগ। বুধবার কৃষ্ণনগর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ঘুরে ঘুরে দেখলেন রেলকর্তারা। মূলত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই স্টেশন ম্যানেজার, দমকল বাহিনী, জিআরপি, আরপিএফ এবং জেলা পুলিশের ডিএসপি সদরকে নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠিত হয়। এ দিন সকালে ওই দলটি স্টেশনে ঢুকে প্ল্যাটফর্মের উপরে আগুন জ্বালিয়ে চা ও খাবার তৈরি করেন, এমন সব দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বললেন। প্রত্যেক দোকান মালিককে আলাদা আলাদা করে ডেকে তাঁরা জানিয়ে দেন, প্ল্যাটফর্মে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করা যাবে না। খাবার বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হবে। এমনকী চা-ও। এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে সবাইকে। তার পরেও যদি কেউ স্টেশন চত্বরে কোনও আগুন জ্বালান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পুলিশের ডিএসপি সদর শ্যামল সরকার বলেন, “স্টেশন চত্বরে আগুন জ্বালানো বন্ধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কেউ যদি এই চত্বরে আগুন জ্বালান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সকলকেই এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।” |
কৃষ্ণনগর স্টেশনে প্রায় সব সময়েই বেশ ভিড় থাকে। ব্যস্ত সময়ে বহু লোকের ভিড়ে পা ফেলাই দায় হয়ে যায়। তিনটি প্ল্যাটফর্মে অন্তত ৬০টি দোকান রয়েছে যেখানে গ্যাস, স্টোভ বা কয়লার উনুন জ্বালিয়ে চা বা নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয়। যেগুলি থেকে যে কোনও মুহূর্তে বড় কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীরাও সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু আমরি কাণ্ডের পরে শহরের হোটেল বা হাসপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ে তৎপরতা শুরু হলেও স্টেশনের পরিস্থিতির পরিবর্তন করা নিয়ে কোনও আগ্রহ প্রশাসনের তরফে দেখা যায়নি। শুধু আগুন নয়, সকলা সন্ধ্যায় স্টেশন চত্বরেই উনুন ধরানোর ফলে প্ল্যাটফর্ম ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। কিন্তু তারপরেও কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরেনি বলে যাত্রীরা দাবি করতেন। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকে ঠিক হয়, স্টেশন চত্বরকে পুরোপুরি ‘আগুনশূন্য’ করে ফেলতে হবে। যাত্রীরা এত দিনে সেই সেই উদ্যোগ দেখে এখন খুশি। কৃষ্ণনগরের স্টেশন ম্যানেজার স্বপন মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা আগেও চিন্তাভাবনা করেছি। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত কাজটা করে ওঠা যায়নি। কিন্তু এখন আর কোনও ভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না। যাত্রী সুরক্ষার জন্যই আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। পাশাপাশি, রেলের সম্পত্তি রক্ষাও এই উদ্যোগের বড় কারণ।”
স্টেশন চত্বরের দোকানের মালিকেরা অবশ্য ‘হতাশ’। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে চায়ের দোকান রয়েছে দেবাশিস ঘোষের। তিনি বলেন, “৩৫ বছর ধরে চা বিক্রি করছি। এখন বাইরে থেকে চা তৈরি করে এনে বিক্রি করা আদৌ সম্ভব কি না, তা জানি না। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।” একই কথা বলেন পাশের পরোটার দোকানের মালিক শ্রীদেব দাসও। তাঁর কথায়, “পরোটা লোকে গরম গরম খেতে চায়। ঘুগনিও ঠান্ডা হলে কেউ খাবে না। তাই বাড়ি থেকে বানিয়ে আনতে গেলে কেউ তা খাবে না।” কিন্তু কোনও ভাবেই স্টেশনে আগুন জ্বালানো তো নিষিদ্ধ। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন তাঁদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন। তবে নিত্যযাত্রী সুকান্ত বসু বলেন, “কৃষ্ণনগরের পাশাপাশি অন্য স্টেশনগুলিতেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ভাল হত। কারণ একই ঘটনা তো সেখানেও ঘটতে পারে।” দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “কৃষ্ণনগর স্টেশন খুব বড়। যাত্রীও প্রচুর। তাই এই স্টেশন দিয়ে আমাদের অভিযান শুরু হল।” |