সামনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন। কিন্তু সেই উত্তেজনা ভুলেই সরস্বতী পুজো করতে চান বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। পুজোকে ঘিরে যাতে কোনও রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি না হয়, তার জন্য সতর্ক কলেজ কর্তৃপক্ষও। সব কলেজেই কোনও এক জন শিক্ষককে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পুজো কমিটি। আর সেই কমিটিতে ছাত্র সংসদের পাশাপাশি থাকছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই সরস্বতী পুজোর আঙিনা থেকে দূরে রাখতে চাইছেন রাজনীতিকে। দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী যেমন বলেন, “সামনেই ভোট। তাই রাজনৈতিক উত্তেজনা তো থাকবেই। কিন্তু তার কোনও ছায়া যেন সরস্বতী পুজোয় না পড়ে। আমরা সকলকেই দলমতনির্বিশেষে সেই কথাই বলছি।” তবু ভয় যায় না। ঠুনকো কোনও কথার ঠোক্করেও লেগে যেতে পারে খটাখটি।
শান্তিপুর কলেজ ছাড়া জেলার কলেজগুলির পরিবেশ অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে শান্তই। কিন্তু গত এক বছরে কলেজে কলেজে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা কিছু কলেজে দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। রাতারাতি বদলে গিয়েছে সেই সব কলেজের ছাত্র সংসদ। সম্প্রতি ছাত্র সংগঠনগুলির হাতে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে। তাতেও উত্তাপ বেড়েছে।
এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অনেক কলেজেই সরস্বতী পুজোর আগেই নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ নিষ্ক্রীয় হয়ে যাবে। তা হলে প্রশ্ন হল, সরস্বতী পুজোর আয়োজন করবে কারা? কারা দায়িত্ব নেবে? তা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। সম্প্রতি এসএফআই কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সরজেন্দ্রনাথ কর। তিনি বলেন, “ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে সরস্বতী পুজো পড়ায় সব দিক ভেবে এগোতে হচ্ছে। আমরা চাই যাতে সব ছাত্রছাত্রীই পুজোয় সমান ভাবে অংশ নিতে পারে।” কী ভাবে সেটা সম্ভব? তাঁর কথায়, “পুজোর আগেই নোটিফিকেশন জারি করার পরে কলেজের কোনও এক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে সব সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়েই কমিটি গঠন করব।”
একই কথা বলেছেন কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলেজের অধ্যক্ষ সাহাজাহান আলি। বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সহ একাধিক ক্লাস প্রতিনিধি এসএফআই থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অধ্যক্ষ বলেন, “আমি ছাত্রদের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি, যাতে পুজোটাকে নিয়ে তারা কোনও বিতর্ক তৈরি না করেন। আমরা এরই মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছি। ঠিক করেছি, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে থাকবে বিদায়ী ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।”
শুধু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই নয়। বিতর্কহীন ভাবে সরস্বতী পুজো সম্পন্ন করাটাও তাই এখন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি যখন কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বগুলায় পুলিশের গুলিতে রাজেশ্বরী মল্লিকের মৃত্যুর পরে স্থানীয় কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। সেখানে এ বার জোট হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার প্রভাব কলেজে সরস্বতী পুজোয় কী পড়বে? ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক নিত্যগোপাল মণ্ডল বলেন, “মনে হয় না সরস্বতী পুজোয় ছাত্র রাজনীতির কোনও প্রভাব পড়বে। আমরা অন্তত সেটা চাই না। আসলে বহু বছরের মতো এ বারেও কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই পুজোয় সক্রিয় ভাবে যোগ দেবে। সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
তবে কিছু ছাত্র নেতার মতে, কলেজের সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব সাধারণত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাতেই থাকে। যারা যে কলেজে শক্তিশালী, কলেজের নিয়ন্ত্রণ থাকে তাঁদের হাতেই। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্ত বলেন, “যাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জয়ী ছাত্র সংসদ জোর করে দখল করে, তারা ভোটের আগে সরস্বতী পুজোর নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতেই রেখে দিতে চাইবে। আমাদের ছেলেরা সদিচ্ছা থাকলেও কলেজের অনুষ্ঠানে কতটা যোগ দিতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি জয়ন্ত পালের মন্তব্য, “রাজনীতির সঙ্গে আমরা কখনওই পুজোকে মিলিয়ে দিতে রাজি নই। এতদিন এসএফআই কিন্তু সেটাই করেছে।” তাঁর কথায়, “আমরা যে সব কলেজে ক্ষমতায় রয়েছি, সেখানে সব সংগঠনের ছাত্রছাত্রীদেরই সরস্বতী পুজোয় সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে আহ্বান করব।” |