জঙ্গলমহল উৎসবের পর এ বার ‘ঝাড়গ্রাম মেলা ও যুব উৎসব’। আবার উৎসবের কেন্দ্রে অরণ্যশহর। ৩৭ তম বর্ষে ‘ঝাড়গ্রাম মেলা ও যুব উৎসবে’ও এ বার পরিবর্তনের ছোঁওয়া। বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে মেলার আয়োজক ছিল সিপিএম নিয়ন্ত্রিত ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি। ‘পরিবর্তিত’ রাজ্যপাটে এ বার মেলা-কমিটিতেও চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে মেলার শুরুর দিনেও। আগে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা হত। গত বছরও মেলার উদ্বোধন হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি। এ বার মেলা শুরু হচ্ছে আজ, বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারি, সাধারণতন্ত্র দিবসে। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম-সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এই মেলা ও যুব উৎসব চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জঙ্গলমহলের অস্থিরতার কারণে ২০১০ সালেই কেবল মেলা হয়নি। না হলে জানুয়ারির শেষে এই মেলা-উৎসব গত সাড়ে তিন দশকে রুটিনে পরিণত অরণ্যশহরে। |
আগে (গত বছর পর্যন্ত) মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হতেন যথাক্রমে ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং মহকুমাশাসক। বিভিন্ন উপ-সমিতিতেও সিপিএমের লোকেদেরই প্রাধান্য থাকত। এ বার মেলা কমিটি গঠন করার জন্য গত ১৭ জানুয়ারি মহকুমাশাসকের দফতরের সভাঘরে সব মহলকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। ওই সভা থেকেই এ বারের মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝা-কে। সভাপতি হয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়কে করা হয়েছে মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি। কমিটির সহ-সভাপতি হয়েছেন ঝাড়গ্রামের সিপিএম পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। বিভিন্ন উপ-সমিতিগুলিতে বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই প্রাধ্যন্য। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নাম ছাপা হয়েছে। বিশেষ পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন তমলুকের তৃণমূল বিধায়ক, রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় রয়েছেন ঝাড়গ্রামের সিপিএম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে, নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মু, গোপীবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো, বেলপাহাড়ির সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা, জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত।
মেলার কার্যকরী কমিটিতে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক, শিক্ষক, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতাদেরও রাখা হয়েছে। মেলা কমিটিতে পূর্ব মেদিনীপুরের সাংসদ-মন্ত্রীরা থাকলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের কংগ্রেস মন্ত্রী মানস ভুঁঞ্যার অবশ্য নাম নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ঝাড়গ্রাম মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর বক্তব্য, “মানসবাবু এই জেলার মন্ত্রী। অথচ তাঁকে মেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটা অপমানকর।” মেলা-কমিটির কার্যকরী সভাপতি মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বুধবার এ ব্যাপারে অভিযোগও করেছেন প্রসূনবাবুরা। তার পরেই এ দিন তড়িঘড়ি মেলা-কমিটির পক্ষ থেকে মানসবাবুকে ফ্যাক্স করে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্বোধক হিসেবে জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের উপস্থিত থাকার কথা। মেলার প্রচার উপ-সমিতির আহ্বায়ক তথা শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি সুদর্শন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা-ওরার বিভেদ ঘুচিয়ে প্রকৃত মিলন মেলা করাটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এ বার ১৭ জানুয়ারি মেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পরে খুব কম সময়ের মধ্যে সব কিছু আয়োজন করতে হচ্ছে। ফলে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হতে পারে।” |