|
|
|
|
জারি হয়নি সরকারি নির্দেশিকা |
কিষান-মান্ডির জন্য জমি দেখা শুরু পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্য কিষান-মান্ডি তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ধান, পাট, আলু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সব্জির ন্যায্য দাম থেকে কৃষকের বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ ইদানীং জোরালো ভাবেই উঠেছে। ফসলের দাম না পেয়ে চাষির আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে। এই প্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকেই মান্ডি তৈরির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণা করছেন। যদিও এ ব্যাপারে সরকারি কোনও নির্দেশিকা এখনও জারি হয়নি। ফলে, সরকারি নানা ঘোষণার মতো ‘মান্ডি’ও কাগজে-কলমেই থেকে যাবে কি না, সে নিয়ে সংশয় রয়েছেই। তবে সরকারি নির্দেশিকা জারি হবেআগাম এই আশা করেই কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখতে চাইছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটি ব্লকে কিষান মান্ডি তৈরির জন্য জমি দেখার কাজ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি বিপণন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রশাসনিক) ব্রজেন সরকার বলেন, “আমরা প্রতিটি ব্লকেই জমি দেখে রাখছি। যাতে সরকার অর্থ বরাদ্দের পর কাজ শুরু করতে দেরি না হয়।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লকেই কিষান মান্ডি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। আর দু’টি হবে ‘প্রিন্সিপাল মার্কেট ইয়ার্ড’। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘প্রিন্সিপাল মার্কেট ইয়ার্ডে’র জন্য প্রাথমিক ভাবে কেশপুর ও চন্দ্রকোনার কথা ভাবা হয়েছে। মেদিনীপুর সদর মহকুমার গড়বেতা ও ঘাটাল মহকুমা এলাকায় ধানের পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণে আলু ও সব্জির চাষ হয়। ওই এলাকাগুলি চন্দ্রকোনা ও কেশপুর লাগোয়া। তাই ওখানেই ‘প্রিন্সিপাল মার্কেট ইয়ার্ড’ তৈরির কথা প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে। ব্লকস্তরের মান্ডির জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরকে জমি দেখার কথা জানানো হয়েছে। কোথায় কতটা সরকারি জমি রয়েছে, তা জানার পরেই কৃষি দফতর গিয়ে দেখবে সেখানে কিষান মান্ডি গড়ে তোলা যাবে কি না। তার পরেই রাজ্য সরকারের কাছে মান্ডি তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব গ্রহন করে সরকার অর্থ বরাদ্দ করলে মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ধান, পাট, আলু ও নানা ধরনের সব্জি চাষ হয়। জেলার বেশিরভাগ মানুষই চাষের উপর নিভর্রশীল। অথচ এখানে সেচের সুযোগ সীমিত। মূলত বর্ষার জলেই চাষাবাদ। তবু, উৎপন্ন ফসলের দাম পান না কৃষিজীবীরা। দারুণ দুর্ভোগে পড়েন। এ ছাড়াও জেলার বৃহৎ অংশ প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় প্লাবিত হয়। তাতেও চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তার উপরে দলমা থেকে হাতির দল এসেও প্রচুর পরিমাণে শস্যহানি করে। উপরন্তু জেলার বেশিরভাগ চাষিই সহায়কমূল্যে ধান বেচতে পারছেন না। কেননা সরকারি ভাবে ধান কেনার গতি অত্যন্ত শ্লথ। কেনার পদ্ধতিগত দিক নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। চাষিরা সেই অভাবি বিক্রিতেই বাধ্য হচ্ছেন। ইতিমধ্যে আলুর দাম পড়তে শুরু করেছে। ফলে বোঝার উপর শাকের আঁটি চাপতে চলেছে। এই সঙ্কট থেকে স্থায়ী মুক্তির উপায় হতে পারে মান্ডি। কিন্তু এখন দেখার রাজ্য সরকার ঘোষণাতেই থেমে থাকে নাকি সত্যিই কৃষক-স্বার্থে মান্ডি তৈরিতে উদ্যোগী হয়। তার প্রথম পদক্ষেপে অবিলম্বে সরকারি নির্দেশিকা জারি হওয়া জরুরি। পরের দফায় নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ-বরাদ্দও প্রয়োজন। সামনের বাজেটে এ সংক্রান্ত ঘোষণা হয় কি না, সে নিয়ে বাকি রাজ্যবাসীর সঙ্গেই অপেক্ষায় জেলার কৃষিজীবী জনতা। |
|
|
|
|
|