|
|
|
|
আড়াই মাসে ক্রেডিট-কার্ড মাত্র ৫ হাজার চাষির |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
পর্যায়ক্রমে চাষে ক্ষতি। ক্রমান্বয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া। চাষির আত্মহত্যাও ঘটে চলেছে। এই অবস্থায় কিষান ক্রেডিট-কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যর্থ প্রশাসন। নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে যেখানে ১ লক্ষ ২৫ হাজার চাষিকে কার্ড দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে, গত আড়াই মাসে কার্ড দেওয়া হয়েছে সেখানে মাত্রই ৪ হাজার ৯০০! বাকি দু’মাসে এক লক্ষ কুড়ি হাজার একশো চাষির হাতে কার্ড তুলে দেওয়া যাবে কি নাসংশয় ষোলো আনা। কিষান ক্রেডিট-কার্ড থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে পারেন কৃষক। না-থাকলে সেই মহাজনের কাছে হাত পাতা। চড়া সুদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়া। বিপর্যয়ের এই চক্র থেকে মুক্তির উপায় হতে পারত যে কার্ড, তা কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন যথেষ্ট উদ্যোগী নয় বলেই অভিযোগ উঠেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর তপনকুমার ভুঁইয়ার সাফাই, “ব্যাঙ্কগুলি সে ভাবে সহযোগিতা করছে না। তা ছাড়া আমাদের নিজেদের কর্মী-সংখ্যাও কম। তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে।” তবে দায় মানছেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জেলায় এ ব্যাপারে সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যাঙ্ক-কর্তা অরবিন্দ মহাপাত্রের বক্তব্য, “কৃষি দফতর থেকে ৫ হাজার ২০০টি কার্ডের জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ৪ হাজার ৯০০ জন উপভোক্তাকেই ব্যাঙ্কের তরফে কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে নথিপত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক-পর্যায়ে তেমন সমস্যার কথা তো জানা নেই!”
রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরেই কিষান ক্রেডিট-কার্ডের উপর জোর দিয়েছিল সরকার। গত অক্টোবরে জঙ্গলমহল-সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘোষণা করেছিলেন, কৃষকের হাতে কিষান ক্রেডিট-কার্ড দেওয়াটা তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। দ্রুত চাষিদের কার্ড দেওয়ার জন্য গত নভেম্বরেই জেলায় দেড় লক্ষ আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পর সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়, চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে ১ লক্ষ ২৫ হাজার চাষির হাতে কার্ড তুলে দিতে হবে। জেলা কৃষি দফতর প্রতিটি ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের তা পাঠিয়ে দেয়। আড়াই মাস পেরোনোর পর দেখা যাচ্ছে মাত্র ৫ হাজার ২০০ জনের আবেদনপত্র ব্যাঙ্কে জমা দিতে পেরেছে কৃষি দফতর! হাতে রয়েছে আর মাত্র দু’-মাস। তা হলে কী ভাবে লক্ষ্য পূরণ হবে? এ বিষয়ে কৃষি আধিকারিকদের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি।
কৃষি দফতরের ব্যাখ্যা, জেলায় ২৯৮ জন কেপিএস (কৃষি-প্রযুক্তি সহায়ক) থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ১৩০ জন। ওই ১৩০ জনকেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে কাজের গতি শ্লথ। তাতেও অবশ্য আড়াই মাসে মাত্র ৫ হাজার ২০০টি আবেদনপত্র ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার পক্ষে কোনও যুক্তি খাটে না। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দিকে কৃষি দফতর আঙুল তুলছে বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “ব্যাঙ্ক যদি অসহযোগিতাই করত তা হলে ৫২০০ আবেদনপত্রের মধ্যে ৪৯০০ জন কার্ড পেলেন কী ভাবে!”
এই পরিস্থিতিতে ফাঁপরে পড়েছেন কৃষকেরা। বেশিরভাগ কৃষক ধানের সহয়াকমূল্য পাননি। পাটেও তাই। আলুর ক্ষেত্রে কী হবে তা এখনই বলা কঠিন। আবার ধানের সময় আসছে। কিষান ক্রেডিট-কার্ড না পেলে ব্যাঙ্ক-ঋণও পাবেন না। ওই ঋণ না পেলে বিপাকে পড়তে হবে সেই চাষিদেরই। মেদিনীপুর সদর ব্লকের সুরঞ্জন বাসুলি বলেন, “আমি আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে এখনও ঋণ পাইনি।” চন্দ্রকোনার চাষি শ্যামল পাল, গড়বেতার চাষি বিজয় ঘোষরা বলেন, “আমরা তো কিষান ক্রেডিট-কার্ডই পাইনি। কোত্থেকে কী ভাবে দেওয়া হবে, তা-ও জানি না!”কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, এ বার বিভিন্ন জায়গায় শিবির করা হবে। প্রচারও চলবে। সত্যি চলে কি নাসেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|