কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে মোহনবাগানকে বাঁচিয়ে রাখল ওডাফা-ম্যাজিক এবং সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের হাত।
সংগ্রামের সংগ্রাম শুরু ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই। ওডাফার বিরতির পরের মিনিট থেকে। নাইজিরিয়ান গোলমেশিন আর দুর্গের শেষ প্রহরীকে বাদ দিলে বাকি পুরোটাই অন্ধকার। বুধবারের মোহনবাগানের সঙ্গে সাদার্ন সমিতির কোনও পার্থক্য খুঁজে পাওয়া গেল না। স্থানীয় লিগে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এক পয়েন্টের ব্যবধান থাকলেও পুরোপুরি সঙ্কটমুক্ত হতে পারলেন না সুব্রত ভট্টচার্য।
সাদার্ন-বধ করতে এ দিন দ্বিতীয় দল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। এই প্রথম ফরোয়ার্ডে খেলতে দেখা গেল জুয়েল রাজাকে। তবে এর আগে রহিম নবিকে স্ট্রাইকারে খেলিয়ে গোল পেলেও, জুয়েল সেই চমক দেখাতে পারলেন না। উল্টে জুয়েল না থাকায় ড্যানিয়েলের নেতৃত্বে মোহন-মাঝমাঠের কঙ্কাল বেরিয়ে এল। তার ওপর জে মুরলীর উদ্দেশ্যহীন ফুটবল আরও যেন অন্ধকূপের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল মোহনবাগানকে। প্রথমার্ধে যতটুকু খেলা এগোল শুধু মণীশ ভার্গব ও হাদসন লিমার সৌজন্যে। একক প্রতিভার জোরেই বাগানের দু’টো উইং সচল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন দু’জনে। |
কিন্তু জোড়া-তাপ্পি দিয়ে কি আর নদীর স্রোত আটকানো যায়? মাঝমাঠের দুর্দশার সুযোগ নিয়ে সাদার্নের ঝড় আছড়ে পড়ল বাগানের রক্ষণভাগে। সংগ্রামকেও বেশ কয়েক বার পরীক্ষায় ফেলে দিলেন সাদার্নের নামিবিয়ান স্ট্রাইকার আলফ্রেড। বঙ্গসন্তানের তৎপরতায় অবশ্য গোলের দরজা খুলতে পারেননি তিনি। কিন্তু সাব্বির আলির অনভিজ্ঞ দলের কাছে মুরলী, দলজিৎ সিংহদের হিমশিম খেতে দেখে বিরতির পরেই সুনীল ছেত্রী এবং ওডাফাকে মাঠে নামাতে বাধ্য হন মোহন টিডি। প্রায় দু’মাস বাদে মাঠে নামলেন সুনীল। আই লিগে শুক্রবার পৈলান অ্যারোজ ম্যাচ। সেটাকে মাথায় রেখেই তাঁকে মাঠে নামিয়েছিলেন সুব্রত। সুনীল-ওডাফা দিয়েও কাজ হচ্ছে না দেখে ব্যারেটোই নেমে পড়লেন মাঠে। ব্যারেটোর উপস্থিতিতে খেলায় ছন্দ ফিরল, মিলল গোলের সন্ধানও। তবে সাব্বিরের রক্ষণ-ফাঁদ ছিঁড়ে গোলের ঠিকানা খুঁজলেন সেই ওডাফাই।
পেনাল্টি থেকে গোল, তবে সেটাও অর্জন করলেন। সাদার্নের ছোট বক্সে এমন তাণ্ডব চালালেন যে সাদার্নের বিদেশি স্টপার ইচের হ্যান্ডবল করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলেও সুনীল ছেত্রীর থেকে ওডাফার অবদানই বেশি। বিপক্ষের দু’জন ডিফেন্ডারকে কাঁধে নিয়ে যে বিদ্যুৎ গতির দৌড়টা দিলেন, তাতেই কেল্লা ফতে। সুনীল তো ফাঁকতালে শুধু একটা টোকা লাগালেন। শেষ চোদ্দো মিনিট প্রথম দলের উপর ভর করেই সাদার্ন জংশন পার করল মোহনবাগান। সাব্বির আলি বেশ বিরক্ত রেফারিং নিয়ে, “রেফারি তো আগেই মোহনবাগানকে তিন পয়েন্ট দিয়ে দিতে পারত। মাঠে নেমে খেলার দরকার কী ছিল?” মোহন কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য যুক্তি, “ক্রিকেটে এলবিডব্লিউ হোক কিংবা ফুটবলে পেনাল্টি, ক্ষোভ থাকবেই।”
ম্যাচের স্কোরলাইন ২-০ দেখালেও, মোহনবাগানের জয় কিন্তু স্বস্তিতে থাকতে দিল না সুব্রত ভট্টাচার্যের দলকে।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, আনোয়ার, রাকেশ, দলজিৎ, প্রদীপ, ড্যানিয়েল (সুনীল), মুরলী (ওডাফা), লিমা, মণীশ, অসীম, জুয়েল (ব্যারেটো)। |