|
|
|
|
পন্টিং-মডেলই সামনে রাখুক সচিনরা |
দীপ দাশগুপ্ত |
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে টিভিতে পন্টিংকে দেখছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। এই কি সেই পন্টিং, এই সিরিজের আগে প্রায় দু’বছর যার কোনও টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল না? যাকে ‘বুড়ো’ বলে একেবারে ছেঁটে ফেলতে চেয়েছিল অস্ট্রেলীয় মিডিয়া? বলা হয়েছিল অবসর না নিলে ছেঁটে ফেলা হোক। আর এখন? অবসর তো দূরের কথা, পন্টিং কী করে পারল, তা নিয়েই দেখছিলাম টিভিতে বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় ব্যস্ত। একটা ইনিংস বাদ দিয়ে পরপর দুটো টেস্ট সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি পন্টিংয়ের প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের বড় প্রাপ্তি।
আমার বক্তব্যটা খুব সহজ। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে বছরে পন্টিং যদি এ ভাবে স্বমহিমায় ফিরে আসতে পারে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেন পারবে না? |
|
সিরিজে এই নিয়ে ছ’বার। আবার বোল্ড দ্রাবিড়। ছবি: গেটি ইমেজেস |
সহবাগ পারেনি, রাহুল তো গোটা সিরিজে বোল্ড হওয়াটা নিয়ম করে ফেলেছে। বাকি থাকছে গম্ভীর, সচিন, লক্ষ্মণ আর কোহলি। গত তিনটে টেস্টে যা হয়েছে, তার পর অ্যাডিলেডেও আবার একটা ইনিংসে হারই প্রত্যাশিত। ফলোঅন বাঁচাতেই তো এখনও ৩৩৪ রান করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন পন্টিং-মডেল সামনে রাখবে না আমাদের গ্রেটরা? বিশেষত সচিন তেন্ডুলকর। ওর শততম সেঞ্চুরি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, তা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। যে লোকটা নিরানব্বইটা সেঞ্চুরি করেছে, সে এক দিন না এক দিন একশো নম্বরটা করবেই। সেটা প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন হলে ভাল, না হলে পরের সিরিজে হবে। কিন্তু ওর একশো হওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ টেস্টটা বাঁচানো। এখন তো টিমের যা অবস্থা, টেস্ট বাঁচানোটাই হবে বিরাট সম্মানজনক ও কৃতিত্বের ব্যাপার। ব্যাপারটা খুব দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু সত্যি। হার মানে বিদেশে টানা আটটা টেস্টে হারা, যা ভারতীয় ক্রিকেটে গত ৪০ বছরে কখনও হয়নি। সেই ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে সচিনের একশো নম্বর সেঞ্চুরি নিয়ে যে ‘হাইপ’-টা তৈরি হয়েছে, তা কোথাও না কোথাও আমাদের একটা বড় প্রশ্নের সামনেও দাঁড় করায়। সচিন গ্রেট, কেউ কোনও দিন একশোটা আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করবে বলে মনে হয় না, ওর জন্য গোটা দেশ গর্বিত। কিন্তু ব্যক্তির কীর্তির জন্য এই আকুতি থেকে টিম কতটা লাভবান হচ্ছে? আমি নিজে ২০০৩-০৪-এর অস্ট্রেলিয়া সফরে দেখেছি, স্টিভ ওয়ের শেষ সিরিজ বলে অস্ট্রেলিয়া টিমের উপরে কী চাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সিরিজই হেরে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া।
|
এক টেস্ট সিরিজে ডাবল এবং ট্রিপল সেঞ্চুরি |
ডন ব্র্যাডম্যান
ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া
১৯৩০
২৫৪ লর্ডস
৩৩৪ হেডিংলে |
ওয়ালি হ্যামন্ড
ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড
১৯৩৩
২২৭ ক্রাইস্টচার্চ
৩৩৬ ন.আ. অকল্যান্ড |
মাইকেল ক্লার্ক
অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত
২০১২
৩২৯ ন.আ. সিডনি
২১০ অ্যাডিলেড |
|
প্রথম দিনই লিখেছিলাম, অস্ট্রেলিয়া ৬০০ করবে আর ঠিক তাই হয়েছে। যেমন খুশি, যে ভাবে খুশি রান করে গেল পন্টিং আর ক্লার্ক। না আছে বোলিংয়ে কোনও পরিকল্পনা, না কোনও নির্দিষ্ট ভাবনা। দেখে মনে হচ্ছিল, খেলতে হচ্ছে বলে খেলছে ভারত। অন্য দিকে সিরিজ শুরুর আগে এই অস্ট্রেলিয়া টিমটাই ছিল ভীষণ নড়বড়ে। বলা হয়েছিল, কোনও বোলিং আক্রমণই নেই। সেখানে সিডল, হিলফেনহস, প্যাটিনসনরা শেষ করে দিল ভারতকে। পন্টিং তো শুধু নয়, মাইকেল হাসিরও তো ছুটি করে দিতে চেয়েছিল মিডিয়া। সেখান থেকে কী দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন হাসিরও। আর অধিনায়ক ক্লার্ক তো রেকর্ডবইতে ব্র্যাডম্যান-হ্যামন্ডের মতো চিরস্মরণীয়দের পাশে বসে পড়ল!
এই চারিত্রিক দৃঢ়তাটা সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণদের নেই, বিশ্বাস করি না। কিন্তু গোটা সিরিজ শেষ হতে চলল, একটা ভাল ইনিংস কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ঘুরে দাঁড়ানোর মতো রসদ। অ্যাডিলেডে আজ, তৃতীয় দিনই কিন্তু শেষ সুযোগ। অ্যাডিলেড উইকেট তৃতীয় দিনই ব্যাটিংয়ের পক্ষে সবচেয়ে ভাল। তার পর কিন্তু উইকেটে ফাটল ধরতে শুরু করবে, স্পিনাররা কার্যকরী হবে। অ্যাডিলেডে কিন্তু ফাটলগুলো চতুর্থ দিন থেকে বড় হতে শুরু করে। নাথন লিয়ঁকে খেলতে পারাটাই তখন সমস্যা হতে পারে।
যা পরিস্থিতি, ফলোঅন বাঁচাতে অন্তত দু’জনকে ‘বিগ হান্ড্রেড’ করতে হবে। হাতে রয়েছে চার জন ব্যাট। গম্ভীর, সচিন, লক্ষ্মণ আর কোহলি। একজন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে গোটা সিরিজে একটা লম্বা দুশো-আড়াইশো রানের জুটি আশা করাটাও কি অন্যায়?
|
অ্যাডিলেড টেস্টের স্কোর |
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৩৩৫-৩) |
পন্টিং ক সচিন বো জাহির ২২১
ক্লার্ক বো উমেশ ২১০
হাসি রান আউট ২৫
হাডিন ন.আ. ৪২
সিডল ক ঋদ্ধিমান বো অশ্বিন ২
হ্যারিস ন.আ. ৩৫।
অতিরিক্ত ২৮। মোট ৬০৪-৭ ডি.।
পতন: ৪৭০, ৫২০, ৫৩০, ৫৩৩।
বোলিং: জাহির ৩১-৪-৯৬-২, উমেশ ২৬-১-১৩৬-১, অশ্বিন ৫৩-৬-১৯৪-৩, ইশান্ত ৩০-৬-১০০-০, সহবাগ ১৬-০-৫৫-০, কোহলি ১-০-৩-০।
|
ভারত প্রথম ইনিংস |
গম্ভীর ব্যাটিং ৩০
সহবাগ ক ও বো সিডল ১৮
দ্রাবিড় বো হিলফেনহস ১
সচিন ব্যাটিং ১২।
অতিরিক্ত ০। মোট ৬১-২।
পতন: ২৬, ৩১।
বোলিং: হ্যারিস ৬-২-১৮-০, হিলফেনহস ৬-১-২১-১, সিডল ৩-০-১৩-১, লিঁয় ৫-২-৯-০, ক্লার্ক ১-১-০-০। |
|
|
|
|
|
|
|