ক্রিকেট বনাম হকির যুদ্ধে মুলতুবি রইল ভারতরত্ন
চিন তেন্ডুলকর না ধ্যান চাঁদ! ক্রিকেট ব্যাট আর হকি স্টিকের এই টক্করে আপাতত তোলাই রইল এ বারের ভারতরত্ন সম্মান।
সচিনের নামটা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। তার পিছনে ছিল দেশজোড়া মানুষের আবেগ। কিন্তু ক্রীড়া মন্ত্রকের পছন্দের নাম ছিল অন্য দুই, ধ্যান চাঁদ ও তেনজিং নোরগে। শেষ পর্যন্ত লড়াইটা এসে দাঁড়ায় ধ্যান চাঁদ আর সচিনের মধ্যে। অন্য পদ্ম সম্মান নির্ধারিত হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে। কিন্তু ভারতরত্নের বিষয়টি নিয়ে সাধারণত প্রধানমন্ত্রী তথা তাঁর সচিবালয় সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সামনে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় ধ্যান চাঁদ নিয়ে হকি মহলের যুক্তি এবং সচিন নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগের দ্বন্দ্বে ঢুকতে চাননি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি আপাতত ভারতরত্ন ঘোষণা না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ তাই পদ্ম সম্মান ঘোষণা হলেও ভারতরত্ন ঘোষণা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, পদ্ম সম্মানের সঙ্গে ভারতরত্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এই পুরস্কার পরে দেওয়া হতেই পারে। বস্তুত, প্রতি বছর ভারতরত্ন দেওয়ারও প্রথা নেই। শেষ বার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ভীমসেন জোশী, ২০০৮ সালে। তার আগের বার পেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর এবং বিসমিল্লা খান, ২০০১ সালে। এই তিন জনই সঙ্গীত জগতের মানুষ।

সচিন তেন্ডুলকর

ধ্যান চাঁদ
এ বার ভারতরত্ন নিয়ে আলোচনায় কিন্তু এই প্রসঙ্গটিও উঠেছিল। সঙ্গীতের তিন দিকপালের উদাহরণ দিয়ে ক্রীড়া মহল থেকে বলা হয়েছিল, এত দিন সব জগতের মানুষ ভারতরত্ন পেয়েছেন। কিন্তু ক্রীড়া ক্ষেত্রের কাউকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদ্বির শুরু করেন। তাঁর আবেদন মঞ্জুর হয়। ক্রীড়া ক্ষেত্রের কাউকে যাতে ভারতরত্ন দেওয়া সম্ভব হয়, সে জন্য নিয়মও বদল করা হয়।
এর পরে আলোচনায় ধ্যান চাঁদ ও তেন্ডুলকরের নাম উঠে আসে। নানা মহল থেকে এই দু’জনকে সম্মান দেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু হয়। ক্রিকেট মহল তথা গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের দাবি ছিল, সচিনকে এই সম্মান দেওয়া হোক। হকি মহলের পাল্টা যুক্তি ছিল, সচিনের বয়স এখনও কম। তাঁর সামনে সারা জীবন পড়ে আছে। কিন্তু ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রথম কাউকে ভারতরত্ন দেওয়া হলে সেটা ধ্যান চাঁদ ছাড়া কেউ হতে পারেন না। কারণ, ধ্যান চাঁদই ক্রীড়া জগতে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক তারকা। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৬, পরপর তিন বার সোনা জয়ী অলিম্পিক হকি দলের সদস্য ছিলেন তিনি। শেষ বার অধিনায়ক। এই যুক্তি দিয়ে হকি মহলের দাবি, ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রথম কাউকে ভারতরত্ন দেওয়া হলে তা প্রয়াত ধ্যান চাঁদকেই দেওয়া উচিত। হকি মহলের এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কাছেও যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। এর মধ্যে নাম সুপারিশের সময় এসে যায়। ধ্যানচাঁদের নাম হকি ইন্ডিয়া-র তরফে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মজার ব্যাপার, সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়া নিয়ে দেশে আলোচনা হলেও বিসিসিআই কিন্তু তাঁর নাম ক্রীড়া মন্ত্রক বা কেন্দ্রের কাছে পাঠায়নি। অজয় মাকেন আজ নিজেই তা জানিয়ে দিয়েছেন। তবে মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে সচিনের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল। ধ্যান চাঁদের দিকে যুক্তি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় কিন্তু বুঝতে পারে, আবেগ সচিনের দিকে। তাই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে সেই আবেগ আর যুক্তির লড়াইয়ে ঢুকে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে চাননি প্রধানমন্ত্রী। বরং ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিলেন তিনি।
ভারতরত্ন নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। সব থেকে বড় বিতর্ক হয়েছিল ১৯৯২ সালে, যখন নরসিংহ রাও সরকার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘মরণোত্তর’ ভারতরত্ন দিয়েছিল। ‘মরণোত্তর’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। সেই বিতর্ক সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সেই মামলায় পুরস্কার কমিটি কিন্তু নেতাজির মৃত্যু নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য দিতে পারেনি। ফলে ভারতরত্ন ফিরিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রথম ও শেষ বারের জন্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে, দেশের এই সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানটি শাসক দলের ঘনিষ্ঠদেরই দেওয়া হচ্ছে। মরণোত্তর দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, শোনা গিয়েছে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। এ বারেও ক্রীড়া ক্ষেত্রের কাউকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা শুরু হওয়ার পর থেকে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। এমনও প্রশ্ন ওঠে, ক্রীড়া ক্ষেত্রকে আলাদা করে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? বলা হয়, লতাকে বাদ দিলে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও তো ভারতরত্নের ক্ষেত্রে উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। রাজ কপূর, দিলীপ কুমার বা দেবানন্দের নামও ভাবা হয়নি কখনও। মরণোত্তর সম্মান দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু আবার মির্জা গালিবের কথা বলেন। আলোচনায় ওঠে শরৎচন্দ্রের নাম। কেউ কেউ কয়েক ধাপ পিছিয়ে সম্রাট আকবরের কথাও বলেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব বিতর্ক সরিয়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়ছিল। কিন্তু হকি স্টিক আর ক্রিকেট ব্যাটের যুদ্ধে আপাতত তা শিকেয়ই তোলা রইল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.