|
|
|
|
কলেজ মোড়ের পুজোয় একই তরজা, বিরক্তিও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পুজো তো রয়েইছে। কিন্তু, তার সঙ্গেই জড়িয়ে রাজনীতি। রাজনীতির আকচাআকচিতে একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার ‘লড়াই’ও সমানে। অনেকেরই অভিপ্রেত না-হলেও এটাই যেন মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোর বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। পুজো-উৎসবের আড়ালে বকলমে সেই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ক্ষমতা প্রদর্শন। যা কারও কারও মতে সুস্থ রাজনৈতিক বিতর্কের চেয়ে অনেক সময়েই হয়ে দাঁড়ায় ‘খেউড়’।
এ বারও অবশ্য এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ‘রাজনৈতিক চাপানউতোরে’ এ বারও সরগরম হতে চলেছে কলেজ মোড়। প্রস্তুতি প্রায় শেষের মুখে। তবে, এই প্রথম ‘থিম’ খুঁজতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল প্রভাবিত পুজো কমিটিগুলিকে। কারণ, তাদের কাছে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া এমন কোনও ইস্যু নেই, যা ‘থিম’ হিসেবে দর্শকদের কাছে হাজির করে নজর কাড়া যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার আক্ষেপ, “এ বারই প্রথম এমন সমস্যায় পড়তে হল! এর আগে আমরা বিরোধীদলে ছিলাম। ফলে, যত ইচ্ছে সিপিএমকে কটাক্ষ করেছি। আর এখন আমরাই শাসক। ফলে, একটু সমস্যা তো হবেই।” কলেজ মোড়ের পুজো দেখতে আশপাশের এলাকার মানুষও আসেন। এক-একটি মণ্ডপ ঘুরতে সময়ও লাগে অনেক। কারণ, মণ্ডপে বিভিন্ন মডেলের পাশে লেখাগুলি পড়তে এবং তার মর্মোদ্ধার করতে সময় লেগে যায়। সেই লেখা-মডেলেই লুকিয়ে থাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি কটাক্ষ। কলেজ মোড় থেকে গোলকুঁয়াচক, এই এলাকার মধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ২০টি পুজো হয়। প্রতিটি পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে থাকেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ পুজো হয়। কোথাও বা ছাত্র পরিষদ, এসএফআই কিংবা এভিবিপি।
ইতিমধ্যেই মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশান্তি, ‘বেহাল’ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে কঙ্কাল-কাণ্ড, রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূলের আকচাআকচি, এ সবই এ বার উঠে আসছে কলেজ মোড়ের পুজোয়। ‘প্রগতি’ ক্লাবের উদ্যোগে যে পুজো হয়, তা পরিচালনা করেন ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এ বার এখানে উঠে আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশান্তির প্রসঙ্গ। এ জন্য পরোক্ষে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই--দু’পক্ষেরই সমালোচনা করা হচ্ছে। অধ্যক্ষকে মারধরের দৃশ্য তুলে ধরার পাশাপাশি লেখা থাকছে, ‘আমি সবুজ ফুলের তাই, দিদি আমায় বলেছে ছোট্ট ছেলে ভাই। অধ্যক্ষকে মারি-পিটি, আমার লাজ নাই। আমি ছোট্ট ছেলে ভাই’। তার পাশেই আবার লেখা থাকছে, ‘আমি বহু দিনের অধ্যক্ষ ভাই, ধোলাই পেটাই আমার সিলেবাসে নাই। তাই বলি কি ব্রাত্য, আমার পদত্যাগ চাই।” এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা ছাত্র পরিষদের নেতা মহম্মদ সইফুল বলেন, “কলেজে এ ধরনের অশান্তির ঘটনা কেউই সমর্থন করেন না। আমরা এই বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করছি।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রভাবিত পুজোর মধ্যে রয়েছে ‘অগ্নিকন্যা’, ‘গরিমা’ ক্লাবের পুজো। ‘গরিমা’র পুজো মণ্ডপে এ বার ব্যক্তিপুজোর বন্যা। সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীকে ‘কৃষ্ণ’ রূপে হাজির করা হচ্ছে। দেখানো হবে, শুভেন্দুর জন্যই জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। যুব-নেতার উপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ রয়েছে। থাকছে কঙ্কাল-কাণ্ডের প্রসঙ্গও। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “আমরা রাজ্য-রাজনীতির সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ই তুলে ধরার চেষ্টা করছি।” ‘অগ্নিকন্যা’ ক্লাবের পুজোতেও থাকছে কঙ্কাল-কাণ্ডের প্রসঙ্গ। যেখানে দেখানো হবে, জেলে থেকেই সুশান্ত ঘোষ কঙ্কাল পাহারা দিচ্ছেন। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বুদ্ধ মণ্ডল বলেন, “মাটি খুঁড়লে যে ভাবে কঙ্কাল বেরোচ্ছে, তাতে সিপিএমের আসল চেহারাটা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে! এই বিষয়টিই আমরা দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে চাই।”
এসএফআই প্রভাবিত পুজোগুলির মধ্যে ‘রেড ক্যাসেল’ ক্লাব অন্যতম। প্রত্যাশিত ভাবেই এখানে উঠে আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশান্তির প্রসঙ্গ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা এসএফআই নেতা অসিত লৌহ বলেন, “আগে কলেজের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধ্যক্ষ-শিক্ষকদের উপর চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে।” সব মিলিয়ে কলেজে মোড়ের পুজোয় এ বারও ‘রাজনৈতিক চাপানউতোর’ অব্যাহত। শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, “সব কিছুর পরিবর্তন হয়, এটার হয় না কেন? রাজনৈতিক দলগুলোর তরজা রোজ শুনতে-শুনতে আমরা ক্লান্ত। সরস্বতী পুজোয় অন্তত নিস্তার পেলেই ভাল হয়। মডেল যদি করতেই হয় ছাত্র সংগঠনগুলি উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিক না। বিজ্ঞান প্রদর্শনী করুক। এল নিনোর মতো প্রাকৃতিক বিষয় প্রাঞ্জল করে বোঝাক। জৈব-চাষের গুণাগুণ নিয়েও প্রদর্শনী করতে পারে। বা অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটের মতো আন্দোলনের অন্তর্বস্তু কীজনপ্রিয় ভাবে উপস্থাপন করুক। তা না করে একঘেয়ে তরজায় দৈন্যই প্রকট!” সেই সঙ্গে পুজোর নামে দিনভর যাতে মাইক না বাজে, শব্দ-তাণ্ডব যাতে না চলে সে দিকে প্রশাসনকে কড়া নজর রাজার আর্জিও জানাচ্ছেন শহরবাসীর একটা বড় অংশ। |
|
|
|
|
|