একে ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপরে সব্জি খেতে লাগাতার হাতির হামলা চলতে থাকায় চাষিদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল রেঞ্জ অফিসে। রেঞ্জ অফিসারকে চার ঘণ্টা তাঁর অফিসের ভিতরে তালা বন্ধ করে রেখে বাইরে আলু ছড়িয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন চাষিরা। বুধবার বাঁকাদহ রেঞ্জ অফিসে এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। অন্য দিকে, বুধবার ভোরে বেলিয়াতোড়ের শাবগ্রামে আট বছরের এক বালিকাকে একটি হাতি শুড়ে পাকিয়ে আছাড় মারে। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই বালিকাকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। |
আলু ছড়িয়ে বাঁকাদহ রেঞ্জ অফিসে বিক্ষোভ চাষিদের। নিজস্ব চিত্র। |
দলমার প্রায় ১৫০টি হাতি দু’টি দলে বড়জোড়া ও বাঁকাদহ রেঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালাচ্ছে। প্রায় রাতে মাঠের সব্জি খেতে হাতিরা দলবেঁধে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ছে। চাষিদের ক্ষোভ, সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করা যাচ্ছে না। তার উপরে গত বছরের আলুও স্টোর থেকে অনেকে বের করতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে মাঠে যে টুকু নতুন আলু ও সব্জি রয়েছে, হাতিরা পাল তা খেয়ে পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে। বাঁকাদহ রেঞ্জের গোলকপুর, পুন্যাডিহি, ভালুয়া, চিতরং প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা এ দিন বেলা ১১টায় বাঁকাদহ রেঞ্জ অফিসে জড়ো হন। রেঞ্জ অফিস চত্বরে তাঁরা আলু ছড়িয়ে দেন। রেঞ্জ অফিসার বলাই ঘোষকে তাঁর অফিসের ভিতরে তাঁরা তালা বন্ধ করে রাখেন।
গোলকপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চাষি রসময় মণ্ডল, শালদহ গ্রামের কুচু গরাইদের অভিযোগ, “এক টানা হাতিরা আমাদের ফসল নষ্ট করে যাচ্ছে। অথচ বন দফতর হাতিদের তাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে না। আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকাও দিচ্ছে না।” বন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ না আসা পর্যন্ত তাঁকে ছাড়া হবে না বলে তাঁরা দাবি জানান। শেষে রেঞ্জ অফিসার এডিএফও (বিষ্ণুপুর) নীলরতন পাণ্ডার সঙ্গে মোবাইল ফোনে তাঁদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার বাঁকাদহ রেঞ্জ অফিসে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এরপরেই তাঁরা বলাইবাবুর অফিসের দরজার তালা খুলে দেন। এডিএফও (বিষ্ণুপুর) বলেন, “৫০টি হাতির দলটি বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমান্ত লাগোয়া ধাদিকা বিটে রয়েছে। রাতে বাঁকাদহ রেঞ্জের এলাকায় ঢুকে হামলা চালাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের রূপনারায়ণপুর বন বিভাগকে হাতিদের দলমার মুখে তাড়াতে বলা হয়েছে।”
বড়জোড়ায় ১০০টি হাতি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাতির হামলায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক জন জখম হন। প্রচুর মাটির বাড়ি ভেঙে দেয় হাতির পাল। সেখান থেকে হাতিদের বেলিয়াতোড়ের দিকে তাড়ানো শুরু করেছে বন দফতর। বুধবার ভোরে তাড়া খেয়ে একটি হাতি শাবগ্রামে একটি বাড়ির উঠোনে গিয়ে শাবানা শেখ নামের একটি বালিকাকে আছাড় মারে। গোবিন্দপুর গ্রামে মহাদেব বাউরির মাটির ঘর ভেঙে দেয়। বড়জোড়ার রেঞ্জ অফিসার সৌমেন মণ্ডল বলেন, “বড়জোড়া থেকে হাতির পালটিকে বেলিয়াতোড়ে নিয়ে আসা হচ্ছিল। সেই সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। আমরা ওই বালিকার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।” |