বিক্রম একেবারে ছুটি নেবে ভাবিনি, বলছেন সহকর্মীরা
হকর্মীর মৃত্যুর খবরটা বুধবার সকালেই পৌঁছে গিয়েছিল ট্রাম কোম্পানির হাওড়ার ঘাসবাগানে ট্রাম কোম্পানির (সিটিসি) ডিপোর কর্মীদের কাছে। মঙ্গলবারও যে সহকর্মী তাঁদের সঙ্গে কাজ করে গিয়েছিলেন তাঁর আকস্মিক মৃত্যু-সংবাদে মর্মাহত ডিপোর সমস্ত কর্মী।
শুধু সহকর্মীরাই নন, রিষড়ার রেলপাড়ের বাসিন্দা ট্রাম কোম্পানির কর্মী বিক্রম সিংহের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকাতেও। মাস পাঁচেক আগে স্ত্রী কুমকুমকে নিয়ে কোন্নগরের নবগ্রামে একটি ঘর ভাড়া করে বসবাস শুরু করেছিলেন বিক্রম। শোকের ছায়া নেমে আসে সেখানেও। চার মাস বেতন না পেয়ে অর্থাভাবে এবং হতাশায় মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন বলে পরিবারের অভিযোগ।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ঘাসবাগান ডিপোয় অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ পান বিক্রম। তখন বেতন পেতেন ৪৫০০ টাকা। সেই সময়েই বিয়ে করেন। তাঁর বাবা ও দাদা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মাস ছয়েক আগে স্থায়ী হন বিক্রম। বেতন বেড়ে দাঁড়ায় ৭০০০ টাকা। এর পরেই কোন্নগরে ঘর ভাড়া নেন।
ওই ডিপোয় বিক্রমের সহকর্মী এবং বন্ধু মনোজ সরকার, কল্যাণ দাসরা জানান, তাঁরাও বিক্রমের মত গত চার মাস বেতন পাচ্ছেন না। সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার বিক্রমকে খুব মনমরা দেখাচ্ছিল। বলেছিল, মুদিখানায় অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। এ বার টাকা না দিতে পারলে মাল দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। মনোজ বলেন, “অর্থাভাব এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে বিক্রম গত কয়েক মাস বাড়ি থেকে টিফিন আনা বন্ধ করে দিয়েছিল। কালকেই বলছিল রিষড়ায় ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়ে আর ও সংসার চালাতে পারছে না। মনটা ভাল নেই। তাই দিন পনেরো ছুটি নেবে। কিন্তু ও যে একেবারে ছুটি নিয়ে চলে যাবে এটা আমরা ভাবিনি।”
রিষড়ার রেলপাড়ে ছোট দোতলা বাড়িতে বাবা-মা, দাদা ও দিদির সঙ্গে থাকতেন বিক্রম। বিয়ে করেন ওই এলাকারই কুমকুমকে। এলাকায় ভাল মানুষ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। কোন্নগরে তিনি এক কামরার একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলেন।
ছবি: প্রকাশ পাল।
মঙ্গলবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রী কুমকুম বলেন, “বেলা ২টো নাগাদ কাজ থেকে ফিরে ও খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়ে। বিকেলে আমাকে মুড়ি আনতে বলে। আমি ঘরের বাইরে ছিলাম। কিছু ক্ষণ পরে দোকানে যাওয়ার আগে ঘরের জানলার দিকে তাকাতেই স্বামীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাই। অর্থাভাবে হতাশা থেকেই ও আত্মহত্যা করল।”
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে বুধবার বিক্রমের দেহ রিষড়ার বাড়িতে আনা হয়। সেখানে তখন অঝোরে কাঁদছিলেন বিক্রমের বন্ধু ও সহকর্মী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও অফিসের ‘দুরবস্থা’র কথা বলছিলেন বারবার। তাঁর ক্ষোভ, “আজ সরকার এক রকম বলছে, কাল আবার অন্য রকম। এই পরিস্থিতির দায় কে নেবে?” অভিজিতের বাবা অমলবাবু বলেন, “পুরোপুরি হতাশা থেকে বিক্রম আত্মহত্যা করল। আমিও ছেলেকে চোখে চোখে রেখেছি। নেতা-নেত্রী আর কারও উপরেই আস্থা নেই।”
যুবক ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন বিক্রমের বাবা মন্টুবাবুও। তাঁর কথায়, “রিষড়ায় আমাদের বাড়িটা খুবই ছোট। অসুবিধা হত। স্থায়ী হওয়ার পরে আমিই বিক্রমকে ঘরভাড়া নিতে বলি। বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইদানীং খুব মনমরা থাকত। ও যে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে বেছে নেবে ভাবতে পারছি না।” বিক্রমের বিধবা স্ত্রীর জন্য এখন সরকারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন প্রৌঢ় এবং পরিবারের লোকেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.