|
|
|
|
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে সুদর্শনকে সম্পাদক করল আলিমুদ্দিন |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • রিষড়া |
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ হুগলি জেলায় গোষ্ঠী-রাজনীতি বন্ধ করতে প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীকে জেলা সম্পাদক করল আলিমুদ্দিন। দলের রাজ্য নেতৃত্বের এ কাজে রীতিমত ‘হতাশ এবং ক্ষুব্ধ’ আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসু। শেষ পর্যন্ত তিনি সুদর্শনবাবুকে ‘স্বাধীন’ ভাবে কাজ করতে দেন কিনা এখন সেটাই দেখার।
প্রয়াত অনিল বিশ্বাস রাজ্য সম্পাদক থাকার সময় থেকেই আলিমুদ্দিন এই জেলায় গোষ্ঠী রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা সে কাজে সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত দুই প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসু এবং রূপচাঁদ পালের গোষ্ঠীলড়াই বন্ধ করতে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বেছে নিলেন সুদর্শনবাবুর মতো ‘গোষ্ঠী-বিহীন’ নেতাকে। প্রাক্তন জেলা সম্পাদক বিনোদ দাস নিজেই সুদর্শনবাবুর নাম প্রস্তাব করেন। তারপরেই বিমানবাবু জানান, ভোটাভুটি ব্যতিরেকে সর্বসম্মত ভাবে সুদর্শনবাবু নতুন জেলা সম্পাদক হলেন।
তবে, ভোটাভুটি না হলেও সুদর্শনবাবু কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হননি। দলের এক নেতার কথায়, “রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শে বিনোদবাবু সুদর্শনবাবুর নাম ঘোষণার পরে সম্মেলনে উপস্থিত অধিকাংশ প্রতিনিধি তাঁর নাম সমর্থন করেন।” দলীয় সূত্রের খবর, অনিলবাবুর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সুদর্শনবাবুর নামে সম্মতি জানাননি।
ভোটাভুটি এড়িয়ে নতুন কাউকে জেলা সম্পাদক করতে বিমানবাবু বুধবার সকাল থেকেই রিষড়ায় উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৬০০ প্রতিনিধির সামনে প্রথমে জেলা সম্পাদক হিসাবে অনিলবাবুর নামই ওঠে। কিন্তু তাতে আপত্তি তুলে সুদর্শনবাবুর নাম প্রস্তাব করেন বিনোদবাবু। একটা সময়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, ভোটাভুটি ছাড়া জেলা সম্পাদক নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী ও জেলার প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সুদর্শনবাবুকেই সম্পাদক হিসাবে বেছে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিমানবাবু। তাঁর এই ঘোষণায় অনিল-শিবির ‘হতাশ’ হলেও রূপচাঁদবাবুর শিবির কিন্তু রীতিমত ‘খুশি’।
অনিলবাবু ছাড়াও আরেক প্রাক্তন সাংসদ তথা শ্রমিক নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের নামও জেলা সম্পাদকের তালিকায় ছিল। বস্তুত, কোনও এক শ্রমিক নেতাকেই জেলা সম্পাদক হিসাবে পছন্দ ছিল শ্রমিকনেতা শ্যামলবাবুর। কিন্তু শান্তশ্রীবাবুর কিছু কাজকর্ম নিয়ে দলীয় স্তরে তদন্ত চলছে। ফলে তাঁর নামেও একাংশের আপত্তি উঠত।
জেলা কমিটিতে ৬৮ জনের মধ্যে নতুন মুখ আটটি। ১১ জন মহিলা। বাদ পড়েছেন ১১ জন। বিনোদবাবু-সহ ৬ জন ‘আমন্ত্রিত’ সদস্য।
মঙ্গলবারই আরামবাগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া অভয় ঘোষ এ বারও জেলা কমিটিতে রয়েছেন। দল যে অভয়বাবুর পাশে আছে তা বোঝাতে নতুন সম্পাদক বলেন, “অভয়বাবুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আইনি লড়াই করা হবে।” বিমানবাবু জানান, মোট ৭০ জনের জেলা কমিটি হবে। পরে দু’জনকে নেওয়া হবে।
তিনি আসার পরে হুগলিতে দলকে ‘শুদ্ধ’ করার প্রক্রিয়া কি তরান্বিত হবে? সুদর্শনবাবু বলেন, “দলকে শোধরাতে কে না চায়? কিছু সমস্যা রয়েছে। তা দেখাও যাচ্ছে। তবে এমন অনেক সমস্যা রয়েছে, যেগুলি সাধারণ ভাবে দেখা যাচ্ছে না। দলের সকলের সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা করে সমস্যাগুলি মেটানোর চেষ্টা করব।” গত নির্বাচনে খারাপ ফল হওয়ার পিছনে মানুষ কেন আমাদের থেকে সরে গেলেন, সেগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও সুদর্শনবাবু জানান।
বস্তুত, প্রায় প্রতিটি জেলা কমিটিই নির্বাচনী পরাজয়ের পিছনে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকে দায়ী করছে। সিঙ্গুর এই জেলাতেই। তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসার আট মাসের মধ্যেও আইনি জটিলতায় আটকে আছে সিঙ্গুর আইন। সিপিএমের নতুন জেলা সম্পাদক সে বিষয়ে কী করেন, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|