ডিপো থেকে ছিটকে বেরোনো একটি বাসের ২০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস দৌড় সাতসকালে কেড়ে নিল ন’টি প্রাণ। জখম অন্তত ৩০ জন। ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ধাক্কা গোটা চল্লিশেক গাড়িতে। পুণের রাজপথে এই রক্তাক্ত যাত্রার খলনায়ক এক বাসচালক। নাম সন্তোষ মারুতি মানে। সহকর্মীদের কথায় যিনি ‘খুবই দক্ষ’, আপাত ভাবে ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক’। যদিও সন্তোষের দীর্ঘদিনের চিকিৎসক দিলীপ বোর্তে জানিয়েছেন, অবসাদে ভোগেন সন্তোষ। একটু ভুলো মনা। কথা অসংলগ্ন হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। সন্তোষের তিনটি সন্তান খবর শুনে কার্যত বাকরুদ্ধ। তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে।
দু’দিন ছুটি কাটিয়ে কাল রাতেও বাস চালিয়েছেন ৪১ বছরের সন্তোষ। ফিরে সকলের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু তিনিই যে কেন আজ সকালে ডিপো থেকে একটি খালি বাস ছিনতাই করে পথে নেমে পড়লেন, কেন উল্টোমুখী লেনে বাস ছুটিয়ে লোকজনকে পিষে দিলেন, তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না তাঁর সহকর্মীরা। মানসিক রোগ না নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে এই অঘটন, তা নিয়ে পুলিশ এখনও মুখ খোলেনি। ফলে দিনভর সন্ত্রাসবাদী হামলার জল্পনাও ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। পুণের পুলিশ কমিশনার মিরন বোরওয়ানকর শুধু জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |
প্রত্যক্ষদর্শী ও ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ সওয়া দশটায় বাস নিয়ে বেরোনোর কথা ছিল সন্তোষের। কিন্তু দু’ঘণ্টারও বেশি আগে ডিপোয় পৌঁছে যান তিনি। সময়ের আগেই তাঁকে বাস দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে শুরু করেন। এর মধ্যেই সাতারা থেকে একটি বাস (এমএইচ ১৪ বিটি ১৫৩২) ডিপোয় নিয়ে আসেন এস হেনড্রে নামে এক চালক। সবাই নেমে গেলে দাঁড়িয়ে থাকা ফাঁকা বাসটিতে সবার অলক্ষে উঠে পড়েন সন্তোষ। সওয়া আটটা নাগাদ গেট ভেঙে বেরিয়ে পড়েন মারণযাত্রায়।
সিগন্যাল মেনে বাঁ দিকে যাওয়ার বদলে প্রথমেই ডান দিকে বাঁক নিয়ে উল্টো লেনে তীব্র গতিতে ছুটতে থাকে সন্তোষের বাস। হা হা করে ছুটে আসেন সহকর্মীরা। সন্তোষকে থামাতে না পেরে তাঁদের কয়েক জন ধাওয়া করেন মোটরবাইকে। খবর পেয়ে আসে পুলিশের পাইলট কার। কিন্তু সহকর্মী, ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী কাউকেই তোয়াক্কা করেননি সন্তোষ। গঙ্গাপুর থেকে গোলিবার ময়দান, ইস্ট স্ট্রিট, শোলাপুর বাজার ঘুরে ফের স্বরগেটের রাস্তা ধরে বাস। ট্রাক বাস, লরি, রিকশা, ফলের গাড়ি, ভ্যান, অটো ২৫ কিলোমিটার পথে যা-ই সামনে এসেছে তাতেই ধাক্কা মেরেছেন সন্তোষ। বড়-ছোট মিলিয়ে অন্তত ৪০টি গাড়ি।
সরসবাগ হয়ে ডান্ডেকর ব্রিজে ওঠার মুখে পথ আটকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সন্তোষের বাসকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন তিন ট্রাফিক পুলিশ। বাসটিকে থামতে না দেখে তাঁরা চাকায় গুলি করেন। তা চাকায় লাগেনি। সন্তোষও কোনও রকম গতি না কমিয়ে ওই তিন পুলিশকর্মীকেই পিষে দিয়ে চলে যান। এর কিছু পরে একটি মারুতিতে ধাক্কা মেরে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে বাসটি। সেই ফাঁকে লাফিয়ে বাসে উঠে পড়েন কলেজছাত্র শরিফ ইব্রাহিম কুট্টি ও অন্য এক পুলিশকর্মী। কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তির পর রণে ভঙ্গ দেন সন্তোষ। শেষ হয় রক্তাক্ত যাত্রা।
সরকারি ভাবে কিছু না বলা হলেও একটি সূত্রের খবর, পুলিশের কাছে সন্তোষ নিজেও স্বীকার করেছেন, তিনি মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ খান। মানসিক সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন সন্তোষের ভাই জগন মানেও। তাঁর কথায়, “কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল দাদার, কিন্তু তা যে এত লোকের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে ভাবিনি। তা হলে দাদাকে বাস চালাতেই দিতাম না।” স্বরগেট ডিপোয় তাঁর সহকর্মীরা কিন্তু বলছেন, গত ৩ বছরে সন্তোষের কাজকর্মে কখনও কোনও গণ্ডগোল চোখে পড়েনি। তাঁর মতো ‘নিয়মিত’ ড্রাইভার বেশি ছিলেন না ডিপোয়। |