পলাশের লাল রঙে তুলির শেষ ছোঁয়া পড়ছে। গত ছয় মাসের প্রস্তুতির পর যবনিকা ওঠার পালা। আজ রাতেই ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ চলে আসছে সংসদের সামনে বিজয় চকে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো থাকছে একেবারে প্রথমে, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের ২৩টি ট্যাবলোর সামনে।
দীর্ঘ ১২ বছর পরে দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসে থাকছে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো। রাজ্যের ট্যাবলোর থিম ‘শান্তিনিকেতন’। শান্তিনিকেতনের পরিবেশ তুলে ধরতে চার দিক খোলা ট্রাকের উপর তৈরি হয়েছে উপাসনাগৃহ, রামকিঙ্কর বেজের দু’টি বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘কলের বাঁশি’ ও ‘সুজাতা’। আশ্রমের খোলা আকাশের নিচেই পড়াশোনা, ছবি আঁকার পরিচিত ছবিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে বিবাদের জেরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ট্যাবলো পাঠানো বন্ধ করে দিলেও এ বার প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৩ জানুয়ারি ‘ড্রেস রিহার্সাল’-এ পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোর অভিনবত্ব দেখে সকলের এত পছন্দ হয় যে ঠিক হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রদর্শনীর পরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি ট্যাবলোগুলির সবার আগে
থাকবে ‘পশ্চিমবঙ্গ’। |
গত রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই খবর পৌঁছে গিয়েছিল। শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে আসতে না পারলেও তিনি দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর খুলবেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়েছেন। দিল্লিতে রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের অধিকর্তা উল্লাস চট্টোপাধ্যায়ও ব্যস্ত। দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীও বারবার কলকাতা থেকে ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন, সব ঠিক আছে কি না। ভারতের সামরিক শক্তি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরার জন্য প্রজাতন্ত্র দিবসে ইন্ডিয়া
গেটের সামনের রাজপথে কুচকাওয়াজের প্রবর্তন করেছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সেই ঐতিহ্য মেনেই আগামি কাল প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিভিন্ন শাখার ট্যাবলো, সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী হবে রাজপথে। তারপরে একে একে আসবে বিভিন্ন রাজ্য ও সরকারি মন্ত্রকের ট্যাবলো।
পিছিয়ে নেই রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীও। রেল মন্ত্রকের ট্যাবলো এতই চটকদার হয়েছে যে ঠিক হয়েছে,
ট্যাবলো-প্রদর্শনীর সেটি সকলের শেষে থাকবে। পঞ্জাব মেলের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ট্যাবলো তৈরি হয়েছে। রাজ্যের ট্যাবলোর সঙ্গে যেমন শিল্পীরা ‘নীল দিগন্তে’-র সঙ্গে রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশন করবেন, তেমনই রেলের ট্যাবলোর সঙ্গে শিল্পীরা ভাংড়া নাচতে নাচতে যাবেন। দু’টি ট্যাবলোরই নকশা তৈরি করেছেন এক বাঙালি, বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী। আবার কুচকাওয়াজের
প্রস্তুতি-শিবিরে সব শিল্পীদের নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেখানে রেলের ভাংড়া শিল্পীরা প্রথম এবং পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা দ্বিতীয় হয়েছেন। কুচকাওয়াজের শেষে আবার ‘সেরা ট্যাবলো’ ঘোষণা হবে। সেখানেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে রেলের ট্যাবলোর জোর লড়াই হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। |