এতটা অপ্রস্তুত বইমেলা অনেক দিন দেখেনি কলকাতা। বুধবার রাত পর্যন্ত চল্লিশ শতাংশ স্টলও পুরো তৈরি হয়নি। প্লাইউড, বাঁশ, কাঠ আর থার্মোকল নিয়ে তাড়াহুড়োয় স্টল তৈরি করতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন কারিগরেরা। সব দেখে মনে হল, শুক্রবারের আগে মেলার পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার আশা নেই। কিন্তু, মেলার মাঠের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’-এর যুগ্ম সম্পাদক সুধাংশু দে আশ্বস্ত করলেন, “কাল ছুটির দিন বই বিক্রির তাড়ায় যে করেই হোক সকলে স্টল দাঁড় করিয়ে দেবেন।” সুধাংশুবাবু নিজেও প্রকাশক। তাঁর স্টলও তৈরি হয়নি।
এরই মধ্যে মেলার মাঠে শিশুশ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ নিয়ে গণ্ডগোল বাধে। সাফাইকর্মীদের জন্য তৈরি গিল্ডের জ্যাকেট গায়ে মেলার মাঠে এ দিন সন্ধ্যায় কয়েক জন কিশোরকে কাজ করতে দেখে গিল্ড-কর্তাদের টনক নড়ে। মাঠে জঞ্জাল সাফাইয়ের দায়িত্ব এক ঠিকাদারের উপরে। ওই ঠিকাদারই শিশুশ্রমিকদের নিয়োগ করেছেন বলে জানান সুধাংশুবাবু। তিনি বলেন, “এত দিন বইমেলা করছি। কোনও দিন এমন অভিযোগ শুনতে হয়নি। আমি যখন থেকে মাঠের দায়িত্বে রয়েছি, তখন থেকেই ওই ঠিকাদার বইমেলায় কাজ করছেন। এমন দুঃখজনক ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা অবশ্যই নজরে রাখা হবে।” এ দিন আবার মেলার মাঠে হাজির ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু স্বয়ং। এই খবর তাঁর কানে যাওয়ার পরে তিনি সুধাংশুবাবুকে ডেকে পাঠান। |
ইতিমধ্যে স্টলের দামে তারতম্য নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ইংরেজি বইয়ের বিক্রেতা এবং প্রকাশকেরা। তাঁদের জায়গা হয়েছে চারটি স্থায়ী মণ্ডপ আর একটি হ্যাঙারে। খোলা মাঠের স্টলগুলো সাধারণ ভাবে বাংলা প্রকাশকদের দেওয়া হয়। স্থায়ী মণ্ডপের স্টলগুলোর কাছ থেকে গিল্ড নয় গুণ বেশি ভাড়া নেয়। মাঠের স্টলের ভাড়া ১০০ বর্গফুটে ৩০৩৭ টাকা। আর ইংরেজি প্রকাশকদের ওই জায়গার জন্য দিতে হয় ২৭ হাজার টাকা। গিল্ডের যুক্তি ছিল, ইংরেজি বইয়ের দাম বাংলা বইয়ের থেকে অনেক বেশি। তাই তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ইংরেজি প্রকাশকদের প্রশ্ন, তাই বলে এতটা বেশি! কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অন্তত সাতটি ইংরেজি প্রকাশক এবং পুস্তক বিক্রেতাদের নিয়ে, যারা বাংলা প্রকাশকদের দরে স্টল পেয়ে ব্যবসা করছেন খোলা মাঠেই।
সেটা কী ভাবে?সুধাংশুবাবু বলেন, “ওরা গিল্ডের সদস্য। ওদের এইটুকু সুযোগ তো দিতেই হবে।” অথচ গিল্ডের কর্তারাও জানেন যে, ওই গিল্ড-সদস্যদের অনেকের কোনও প্রকাশনাই নেই। এমনকী, পুস্তক ব্যবসার সঙ্গেও তাঁদের যোগও নেই। তাঁরা নামমাত্র ভাড়ায় বিশাল স্টল নিয়ে অন্যকে বিক্রি করে দেন। যাঁদের বইয়ের বাণিজ্যের সঙ্গেই যোগ নেই, তাঁরা গিল্ডের সদস্য হন কী করে? এই প্রশ্নের জবাব সরাসরি এড়িয়ে সুধাংশুবাবু বলেন, “এই নিয়ে লিখিত অভিযোগ বা প্রমাণ পাইনি। পেলে অবশ্যই গিল্ড খতিয়ে দেখবে।” |